ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ক্ষতিপূরণের দাবি কৃষকদের, পলাতক ভাটা কর্তৃপক্ষ

মহেশপুরে ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পুড়ে গেছে ৫০০ বিঘা জমির ফসল

এম রায়হান, ঝিনাইদহ থেকে

প্রকাশিত: ১৯:৫৩, ৩১ মে ২০২৫

মহেশপুরে ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পুড়ে গেছে ৫০০ বিঘা জমির ফসল

এক রাতেই পুড়ে শেষ হয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৫০০ বিঘা জমির ফসল। শত শত কৃষকের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে ফসলের মাঠ। ঝিনাইদহের মহেশপুরে অবৈধ ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় কৃষকের মাঠের পর মাঠ ফসল পুড়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। এ ঘটনার পর থেকে ইটভাটা কর্তৃপক্ষ পলাতক রয়েছে। ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি ইটভাটা উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ পরিদর্শন করেছেন মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা।

শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বেলেমাঠ গ্রামের দিগন্তজোড়া মাঠে কৃষকের বুকফাটা কান্না আর হাহাকার। মাঠে আবাদ হচ্ছিল পটল, ড্রাগন ফল, কচু। ধানের আবাদ করার জন্যও ছিল শত শত বীজতলা। শুক্রবারও সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু এক রাত পরই গ্রামের পাশ দিয়ে যাওয়া গ্রামীণ সড়কের ধারে থাকা অবৈধ ইটভাটা স্টোন ব্রিকস থেকে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হলে তা ছেয়ে যায় পুরো ফসলের মাঠ। শনিবার সকালে কৃষকরা মাঠে গিয়ে দেখতে পান, সব ফসল পুড়ে গেছে। প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে স্থানীয় অন্তত ২০০ কৃষক পথে বসার উপক্রম হয়েছেন।

তাদের অভিযোগ, স্টোন ব্রিকস নামের ওই ইটভাটা কোনো নিয়মনীতি না মেনে দিনের পর দিন কালো ধোঁয়া ছাড়ছিল। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব চললেও কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। এ ঘটনায় তারা ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি ইটভাটা উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সন্টু মিয়া বলেন, “শনিবার সকালে মাঠে গিয়ে দেখি চোখমুখ জ্বলছে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, রাতে স্টোন ব্রিকস ইটভাটা থেকে গ্যাস ছেড়েছে। সেই গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছে পুরো মাঠে। পুড়ে গেছে মাঠের পর মাঠ ফসল। এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।”

কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, “ইটভাটার কালো ধোঁয়া আর গ্যাসে মাঠের সব ফসল শেষ হয়ে গেছে। ড্রাগন ফল, শিম গাছ, তামাক পাতা, কচু, মরিচ, কলাগাছ, মাল্টা, পেঁপে—সব পুড়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।”

কৃষক আব্দুল আলীম জানান, “আমি ঋণ নিয়ে ১০ বিঘা জমিতে কলা, কচু, পেয়ারা, পেঁপে ইত্যাদি চাষ করেছিলাম। সব শেষ হয়ে গেছে।”

কৃষক রজব আলী বলেন, “মাঠের সব মরিচগাছ পুড়ে গেছে। শুক্রবারও সব ঠিকঠাক ছিল। শনিবার এসে দেখি সব ছারখার।”

কৃষক খায়রুল ইসলাম জানান, “আমাদের ৫০০ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তা না হলে দুই শতাধিক কৃষক পথে বসবে।”

সারা মাঠে কৃষকের হাহাকার আর কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

এদিকে খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ পরিদর্শন করেছেন মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা। তিনি বলেন, “আজ সকালে আমি ফোনে জানতে পারি, ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় মহেশপুর বেলেমাঠ এলাকায় কৃষকের প্রায় ৫০০ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ড্রাগন ফল, মুখিকচু, মরিচ, পেঁপে, কলাগাছ, পটলসহ সব ফসলের পাতা পুড়ে গেছে। এতে ফলনের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।”

তিনি আরও জানান, ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে একটি তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

এ বিষয়ে ইটভাটা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। কৃষকরা জানিয়েছেন, বিক্ষুব্ধ কৃষকদের রোষানল এড়াতেই তারা পলাতক রয়েছেন।

সজিব

×