ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মধুপুর বন থেকে হারিয়ে গেছে বুনো বরই ‘আনাই’

মো. সাইফুল ইসলাম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মধুপুর, টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৩:৪৬, ২ জুন ২০২৫

মধুপুর বন থেকে হারিয়ে গেছে বুনো বরই ‘আনাই’

বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা থেকেও ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক বনভূমি। বন উজাড় ও সামাজিক বনায়নের প্রভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে চেনা-অচেনা গাছপালা, লতা-পাতা ও গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এরই এক করুণ উদাহরণ — এক সময় শিশু-কিশোরদের প্রিয় বুনোফল ‘আনাই’ বা ‘আনাইগোটা’, যা আজ আর মধুপুরের বনজঙ্গলে খুঁজে পাওয়া যায় না।

এক সময় আনাই ফল ছিল গ্রামীণ শিশুদের আনন্দের উৎস। কেউ কেউ বাজারেও বিক্রি করত এই ফল। ঝোপ-জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করে এক থেকে দুই টাকা সের দরে বিক্রি হতো এই ফল। আবার অনেক শিশু-কিশোর নিজেরাই বনে গিয়ে ফল সংগ্রহ করে খেত। কিন্তু আজ এই ফলের অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্ত। মধুপুরে সামাজিক বনায়নের নামে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে তৈরি করা বনভূমিতে এ গাছ আর জন্মায় না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, “আমাদের সময় সবাই আনাই ফল চিনত। এখন পাহাড় ও বনজঙ্গলে এ গাছ আর পাওয়া যায় না। নতুন প্রজন্ম তো জানবেই না, এমন কোনো ফল ছিল।” কালের বিবর্তনে আর বন উজাড়ের ধারাবাহিকতায় একে একে হারিয়ে গেছে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এই ফলগুলো।

জানা যায়, আনাই হলো কুল বা বরই গোত্রের একটি বুনো প্রজাতির ফল। স্থানীয়ভাবে একে ‘আনাই’, ‘আনাইগোটা’, ‘আনিগোলা রাগবরই’ কিংবা ‘জংলি বলি’ নামেও ডাকা হয়। পাকা ফলের ঘ্রাণ তীব্র, আকৃতিতে ছোট গোলগাল, পাখি ও বুনোপ্রাণীদের অন্যতম খাদ্য। তবে বর্তমানে মিষ্টি ও বাণিজ্যিক জাতের কুলের চাপে এসব বুনোফল হারিয়ে যাচ্ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বরইয়ের মোট ১২টি প্রজাতি রয়েছে। এরা হলো: আনাই, ব্রুনি, পাপড়িহীনা, বনবোগুরি, লাব্রা, রাতা, শিয়া, পলেন, বঢা, জাইলো, কুরকুরি ও কুল বলি। এক সময় গ্রামীণ জঙ্গল ও বনাঞ্চলে এসব প্রজাতির গাছ হরহামেশা দেখা যেত। কিন্তু বর্তমানে সেগুলোর অনেককেই আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

এদিকে এখন কচুয়া, আপেল, বাউল, কাশ্মীরি, বলসুন্দরী ইত্যাদি নানা জাতের কুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। মানুষ যদিও আজকাল এসব জংলি বরই না খেলেও পাখি ও বুনোপ্রাণীরা এগুলোর উপর নির্ভর করেই বাঁচে। তাই এসব গাছ সংরক্ষণ করা জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর স্বার্থে এখনই উদ্যোগ না নিলে — আনাইয়ের মতো আরও অনেক ফল ও উদ্ভিদ হয়তো একদিন শুধুই স্মৃতির পাতায় রয়ে যাবে।

ফরিদ 

×