
ছবি:জনকণ্ঠ
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক যাত্রী যাতায়াত এবং কোটি কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। এসব কর্মকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে ঢাকা কাস্টমস হাউস। ফলে যাত্রীসেবা, রাজস্ব আদায়, চোরাচালান ও রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধসহ নানামুখী কাজের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এদিকে ঢাকা কাস্টমস হাউস সার্বিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করে এর শক্তিশালী দিক, দুর্বলতা, বিদ্যমান সমস্যা এবং সম্ভাব্য সমাধান চিহ্নিত করতে তিন মাসব্যাপী একটি গবেষণাও করেছে।
গবেষণায় দেশের বাস্তবতা ও আন্তর্জাতিক বিষয়টি সামনে রেখে একটি আধুনিক, মানবিক ও প্রযুক্তিনির্ভর শুল্ক ব্যবস্থাপনার রূপরেখা প্রস্তাব তৈরি করা হয়। সম্প্রতি এ প্রস্তাবনাটি গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। তবে গবেষণায় উন্নত প্রযুক্তি না থাকায় অবৈধ পণ্য, চোরাচালান ও শতভাগ স্ক্যানিং সম্ভব হচ্ছেনা।
গবেষণা প্রস্তাবে বলা হয়- বিমান বন্দরে অন্যান্য সংস্থার মতো কাস্টমসও চার শিফটে ডিউটি করে। প্রতি শিফটে গড়ে ১৬/১৭ জন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। পিক আওয়ারে ৬/৭টি ফ্লাইট একসঙ্গে অবতরণ করে। তখন এয়ারপোর্টে প্রায় ৫ হাজার যাত্রী থাকে। ৪টি স্ক্যানারের মাধ্যমে ৪০-৪৫ মিনিট সময়ে ১৬/১৭ জন অফিসার দিয়ে সর্বোচ্চ ৬০-৭০টি ব্যাগ স্ক্যান করা সম্ভব। বাকি যাত্রীগণ বিনা স্ক্যানিংয়েই চলে যায়। তার চেয়ে বেশি স্ক্যানিং করতে গেলে সময় বেশি লাগে, যাত্রীগণ বিরক্ত হন এবং বিমান বন্দরের জন্য প্রযোজ্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে আমাদের অবস্থানের অবনমন হয়।
বাণিজ্যিক আমদানির কারণে এয়ারপোর্ট পেসেঞ্জার হতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়। এটি দৃশ্যত ভালো হলেও যাত্রীসেবার মান হ্রাস করে, দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি করে, চোরাচালান বৃদ্ধি করে, নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ায় এবং ডিপার্টমেন্টের সুনাম নষ্ট করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন শতভাগ স্ক্যানিং করাই বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রচলিত। তবে সেবার মান ধরে রাখার জন্য অধিকাংশ এয়ারপোর্টে বর্তমানে ল্যান্ডসাইডে স্ক্যানিং না করে এয়ার সাইডে স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়। প্রতি বেল্টে ২/৩ টি করে স্ক্যানার বসানো হয় যাতে ৩০-৪৫ মিনিটের মধ্যে বড় ফ্লাইটের সকল ব্যাগ (প্রায় ১২০০ ব্যাগ) স্ক্যান সম্পন্ন করা যায়। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাগগুলো ডাইভার্টিং বেল্ট দিয়ে কাস্টমস রেড চ্যানেলে নিয়ে আসা হয়। বিমানযাত্রীকে রেড চ্যানেলে এনে ব্যাগেজ অধিকতর পরীক্ষণ করা হয়।
এসব সমস্যারা সমাধান প্রস্তাবে বলা হয়- আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার অনুসরণে বিদ্যমান টার্মিনাল ১ ও ২ এ বর্তমান ল্যান্ডসাইডে বিদ্যমান স্ক্যানারের বদলে এয়ারসাইডে ব্যাগেজ বেল্টের শুরুতে স্ক্যানার বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমান টার্মিনাল ১ ও ২ এ একসাথে ৮টি ইনকামিং প্লেন নামতে পারে। প্রায় ৪ হাজার যাত্রী একত্রে এয়ারপোর্টে নামার সুযোগ আছে। বর্তমান অবস্থায় পিক আওয়ারে ২-৩ হাজার যাত্রী একত্রে নামে। কাস্টমস হলে ২/৩ শত যাত্রী একত্রে প্রবেশ করতে পারে। সব যাত্রীকে চেক করা সম্ভব হয় না। বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক কোন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সিস্টেম ব্যবহার করা হয় না বিধায় অনেক যাত্রীকে ছেড়ে দিতে হয়।
৩য় টার্মিনালের অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে উল্লেখ করে বলা হয়, সেখানে ১৬টি বেল্টে একত্রে ১৬টি প্লেনে প্রায় ৮ হাজার যাত্রী নামতে পারবে। সেখানের কাস্টমস হল আরো ছোট। ফলে ৩য় টার্মিনালে ঝুঁকি আরো বাড়বে। অতিসাম্প্রতিক কাস্টমস হাউস, ঢাকার কোডে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের লক্ষ্যে কিছু বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সেটি দিয়ে সীমিত আকারে স্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়- অনেক যাত্রী, বিশেষত বিদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রী না জেনে ব্যাগেজরুলের প্রাপ্যতার বাইরে পণ্য নিয়ে আসেন। তারা অধিকাংশ সময়ই শুল্ক-কর পরিশোধ করে পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করানোর বদলে ফিরার সময় তার দেশে ফেরত নিয়ে যেতে চান। আন্তর্জাতিকভাবে এ বিধানটি অনেক বিমানবন্দরেই বিদ্যমান রয়েছে। এ বিধানটি চালু করা জরুরি।
বিমান ক্যাটারিং সার্ভিস এলাকায় কাস্টমসের কোন ডিউটি থাকে না জানিয়ে বলা হয়- ইতিপূর্বে এখান দিয়ে স্বর্ণ চালান পাচারের সময় আটক হওয়ার রেকর্ড আছে। তাই খাবারের গাড়ি ও খাবারের উচ্ছিষ্ট বহনের গাড়ি স্ক্যান করার জন্য ক্যাটরিং সার্ভিস ভবনের সামনে একটি ভেহিক্যাল স্ক্যানার স্থাপন জরুরি।
ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনার মুহম্মদ জাকির হোসেন বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমস সেবার মান উন্নয়নে আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ করছি। যাত্রীদের সুবিধা বাড়ানো, নিরাপত্তা জোরদার করা এবং চোরাচালান প্রতিরোধ করা আমাদের মূল লক্ষ্য। এজন্য আন্তর্জাতিক মান অনুসারে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে ব্যাগ পরীক্ষার যন্ত্র স্থাপন, আগাম যাত্রী তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা চালু এবং দেহ পরীক্ষা করার যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নতুন টার্মিনাল চালু হলে যাত্রী ও পণ্যের সংখ্যাও বাড়বে, তাই ঝুঁকি কমাতে উন্নত প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম থাকা জরুরি।
আঁখি