
ছবি: সংগৃহীত
বিগত সরকারের করা বাসা ভাড়া নীতির ফলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বছরে অন্তত ৮০ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ডরমেটরিতে ৯৯টি বাসা থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে বাসা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অধিকাংশ পরিবার। এই ভাড়ার চেয়ে অনেক কম খরচে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ শহরে বাসা পাওয়া যায় বলে জানান তারা। এদিকে কোটি টাকার ভবনগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়াও সংস্কারবিহীন এই ভবনগুলো ব্যবহার অযোগ্য হওয়ার পথে বলে জানিয়েছে প্রকৌশল দপ্তর।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের আবাসন কোয়ার্টারের ৭৭ শতাংশ বাসা ফাঁকা পড়ে আছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী এসব বাসায় সরকারি রেটে ভাড়া কর্তনের সিদ্ধান্তের পর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাসা ছেড়ে দেন অনেকেই। অতিরিক্ত ভাড়া ছাড়াও নিরাপত্তাহীনতা ও পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকার অভিযোগ রয়েছে। ফলে এসব বাসা ফাঁকা পড়ে আছে।
এস্টেট ও প্রকৌশল দপ্তর জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্য দশটি ভবনে মোট বাসা রয়েছে ৯৯টি। তার মধ্যে ৭৮টি বাসা ফাঁকা রয়েছে। এছাড়া তিনটি ভবনের পুরোটিই খালি রয়েছে। এদিকে পুরাতন ভবনে এত ফাঁকা স্বত্বেও নতুন করে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য ১০০০ স্কয়ার ফিট বিশিষ্ট ৩৬টি এবং কর্মচারীদের জন্য ৬০০ স্কয়ার ফিটের ৩৬টি বাসা তৈরি করা হচ্ছে। ভাড়া নাগালের মধ্যে না এলে এগুলোও ফাঁকা থাকার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আবাসিক ভবনগুলোর চার পাশে ঝোপ-ঝাড়ে ভরে গেছে। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ ও ভবনের গায়ে শেওলা জমে গেছে। ভবনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ফাঁকা থাকার ফলে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এতে ভবনগুলোর অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কক্ষের জানালা, দরজা, বাতি ও টয়লেট ফিটিংসসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র রাতের আধারে চুরি হয়ে যাচ্ছে। ভবনে বৈদ্যুতিক বাতি না থাকায় ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে।
শিক্ষক-কর্মকর্তারা বলছেন, বছর দুই আগেও সবগুলো বাসাতে শিক্ষক কর্মকর্তারা পরিবার নিয়ে থাকতেন। কিন্তু ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী কোয়ার্টারে সরকারি রেটে ভাড়া কর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। নীতিমালা অনুযায়ী প্রভাষক ও কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে মূল বেতনের ৪০ শতাংশ এবং অধ্যাপক ক্যাটাগরির শিক্ষকদের ৩৫ শতাংশ হিসেবে ভাড়া দিতে হয়। এতে একেকজন শিক্ষক-কর্মকর্তার গড়ে ভাড়া দাঁড়ায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এদিকে কুষ্টিয়া বা ঝিনাইদহে এর চেয়ে কম ভাড়ায় ভালো মানের বাসা পাওয়া যায়। ফলে একযোগে অধিকাংশ শিক্ষক কর্মকর্তারা কোয়ার্টার ছেড়ে শহরে বাসা ভাড়া নেন। তাছাড়া তাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য ক্যাম্পাসের চেয়ে শহরে ভালো পরিবেশ থাকায় তারা শহরেই থাকছেন অনেকেই।
আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা জোরদার, ভাড়া কমানো, ভবনগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নিয়মিত সংস্কার এবং বাচ্চাদের শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা হলে আবাসিক এলাকা আবার আগের মতো উচ্ছ্বাসে ভরে থাকবে বলে মনে করছেন সিনিয়র অধ্যাপকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এ.কে.এম শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন বদ্ধ থাকার ফলে ভবনগুলোর অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা চাহিদাও আলোকে সংস্কার করে থাকি। বর্তমানে কোনো চাহিদা না থাকায় কোয়ার্টারগুলো সংস্কার করা হচ্ছে না। যদি ভবনগুলো এখন সংস্কার না করা হলে আর কিছুদিন পরে সেগুলো আর ব্যবহার করা যাবে না।’
এদিকে গত ২৮ অক্টোবর শিক্ষক কর্মকর্তাদের আবাসিক ভাড়া পুনরায় নির্ধারণের জন্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুুল হান্নান শেখকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দুই মাস পার হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানান কমিটির আহ্বায়ক। তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকার বাহিরের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রতি স্কয়ার ফিটের ভাড়া ৬টা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। যদি এটা কার্যকর হয় তাহলে এই ভবনগুলো থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বছরে ৮০ লাখ টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে। সেই সাথে কোটি টাকার ভবনগুলো নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।’
বাসা বরাদ্দ কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন, ‘গত সরকারের সময়ে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ক্যাম্পাসের কোয়ার্টারে সরকারি রেটে ভাড়া কাটার সিদ্ধান্ত হয়। কেউ বাড়তি ভাড়া দিয়ে এই বাসায় থাকতে চায় না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সংশোধিত কমিটিকে জানিয়েছি তারা যেন এই পুরাতন বাসাগুলোকে সাবস্টেন্টেড ঘোষণা করে একটা ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়। তাহলে শিক্ষক-কর্মকর্তারা থাকতে পারতো। কিন্তু বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে এরকম কোন উদ্যোগ না নেওয়ার ফলে বাসাগুলো ফাঁকা পড়ে আছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘বাসাগুলো ফাঁকা থাকার কারণ জানতে চেয়ে ইউজিসি একটা প্রস্তাবনা চেয়েছিল। আমরা প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা পাইনি।’
আঁখি