
উন্নত জীবনযাত্রার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিশেষ করে গ্রাম বা মহল্লার মানুষের জন্য জেলা শহরের সাথে সহজ ও নিরাপদ সংযোগ গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। কারণ জেলা শহরেই রয়েছে চিকিৎসা, শিক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র। অথচ পাবনা সদর উপজেলার রাজাপুর এলাকার মানুষ আজও সেই মৌলিক যোগাযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী রাজাপুর গ্রামের মাহাতাব টাওয়ার থেকে হযরত ওমর (রাঃ) কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পর্যন্ত মাত্র এক কিলোমিটার দীর্ঘ একটি কাঁচা রাস্তা—যেটিই এলাকার প্রধান সংযোগপথ—পাকা না হওয়ায় কয়েক হাজার মানুষ বছরের পর বছর ভোগান্তিতে পড়ছেন। বর্ষাকালে রাস্তাটি হাঁটুসমান কাদায় পরিণত হয়, তখনকার দুর্ভোগ যেন বর্ণনাতীত।
এই সড়ক ব্যবহারকারী ভ্যানচালক মালেক, আফজাল ও আলেপ বলেন, “আমাদের ভ্যান রোজগারের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু এই কাঁচা রাস্তা দিয়ে শহরে যাওয়া-আসা করতে গিয়ে প্রায়ই ভ্যান নষ্ট হয়ে যায়। পেছনে পড়ে থাকতে হয় কয়েকদিন। শুধু এক কিলোমিটার রাস্তার কারণে আমাদের ৫ থেকে ৮ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয় শহরে।”
শুধু শ্রমজীবী মানুষ নন, শিক্ষার্থীরাও এই রাস্তার কারণে পড়ছেন চরম অসুবিধায়। স্থানীয় ছাত্র আব্দুর রহমান আবিদ, আল-আমিন ও নয়ন বলেন, “প্রতিদিন এই কাঁচা রাস্তা হেঁটে শহরে যেতে হয়। বৃষ্টির দিনে পা ডুবিয়ে কাদা মাড়িয়ে যাই স্কুলে। অনেক সময় দেরি হয়ে যায়। অসুস্থ কেউ হলে তো আরও বিপদ—অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতেই পারে না।”
রাস্তাটির দৈন্যদশার কারণে এলাকাবাসীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য মেস বা হোস্টেল গড়ে ওঠেনি, কৃষকরা তাদের ফসল বাজারে নিতে পারছেন না সময়মতো। শাহিন নামের এক যুবক জানান, “আমাদের এলাকার কৃষকরা ভোরে মাসুম বাজার ও বড় বাজারে পণ্য বিক্রি করতে যায়, কিন্তু এই রাস্তা দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়া একেবারে অসম্ভব। তাই বাধ্য হয়ে ঘুরে ঘুরে যেতে হয়। ফলে পরিবহন খরচ বেড়ে যায়, লাভ কমে যায়।”
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বারবার আবেদন করলেও রাস্তাটি পাকা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। স্থানীয় ইউপি সদস্য এস.এম. ওয়ারেস বলেন, “রাস্তাটি পাকা করার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যত দ্রুত সম্ভব মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।” তবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হাসানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
একটি মাত্র কাঁচা রাস্তা—যেটি হতে পারত একটি এলাকার প্রাণ, সেটিই এখন উন্নয়ন ও স্বাভাবিক জীবনের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাজাপুরের মানুষ আশায় আছেন, হয়তো কোনোদিন সরকারি উদ্যোগে বদলে যাবে তাদের দুর্ভাগ্যের চিত্র।
ফরিদ