ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ফোলা পেটের পিছনে লুকিয়ে থাকা কারণগুলো জানলে চমকে যাবেন

প্রকাশিত: ১৮:৩৩, ৩ জুন ২০২৫

ফোলা পেটের পিছনে লুকিয়ে থাকা কারণগুলো জানলে চমকে যাবেন

ছবি: সংগৃহীত।

প্রায়ই কি পেট ফুলে যায় বা গ্যাস হয়? বেশিরভাগ মানুষ ভাবেন বেশি খাওয়া হয়েছে কিংবা হালকা হজমের সমস্যা চলছে। যদিও এগুলো সাধারণ কারণ, তবে চিকিৎসকরা বলছেন—বিষয়টি অনেক জটিল এবং গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে।

এইচটি লাইফস্টাইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মণিপাল হাসপাতাল, বিজয়ওয়াড়ার পরামর্শক গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডাঃ রাজেশ বাথিনী জানান, “অনেকে ভাবেন বদহজম হলেই পেট ফুলে থাকে। কিন্তু কিছু খাবার—যেমন উচ্চ-ফাইবারযুক্ত সবজি বা দুধজাত খাবার (যারা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট)—পেট ফুলে যাওয়ার কারণ হতে পারে। পাশাপাশি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগ যেমন পেপটিক আলসার, যা Helicobacter pylori সংক্রমণে হয়, জিইআরডি (GERD) বা আইবিএস (IBS) -ও এই সমস্যার উৎস হতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যা কিংবা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও (যেমন অ্যাসপিরিন বা আয়রন সাপ্লিমেন্ট) এই সমস্যার পেছনে থাকতে পারে। এমনকি হার্ট ফেলিওর বা হার্ট অ্যাটাকের মতো রোগেও অনেক সময় একমাত্র উপসর্গ হতে পারে পেট ফোলা। কিছু ক্ষেত্রে, পাকস্থলী, খাদ্যনালী বা অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণও হতে পারে এই পেট ফুলে থাকার অনুভূতি।”

ভুবনেশ্বরের মেডিকেল গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডাঃ জ্ঞানারঞ্জন রাউত বলেন, অতিরিক্ত খাওয়া, চিউইং গাম চিবানো, কার্বনেটেড পানীয় পান করা—এইসব খাদ্যভ্যাস সাধারণ কারণ হলেও দীর্ঘস্থায়ী পেট ফোলা বড় কোনো সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। “আইবিএস, ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স, সেলিয়াক ডিজিজ বা এসআইবিও (SIBO)-র মতো সমস্যা এর পেছনে থাকতে পারে। বিশেষ করে নারীদের হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতা পেট ফোলার অন্যতম কারণ। পাশাপাশি মানসিক চাপ ও উদ্বেগ অনেক সময় অন্ত্রের কার্যপ্রণালীতে প্রভাব ফেলে এমন উপসর্গ তৈরি করে,” জানান তিনি।

মাঙ্গালোরের কে এম সি হাসপাতালের ডাঃ অনুরাগ শেঠি বলেন, “গ্যাস ও পেট ফোলাকে আমরা সাধারণত খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে যুক্ত করি, তবে এই সমস্যার পেছনে শরীরের জটিল ক্রিয়া রয়েছে। IBS-এর ক্ষেত্রে 'গাট-ব্রেইন অ্যাক্সিস'-এর সমস্যা হয়, যার ফলে সামান্য গ্যাসও অস্বাভাবিক অস্বস্তিকর মনে হয়।”

তিনি আরও জানান, “ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের মতো পরিস্থিতিতে অপর্যাপ্তভাবে হজম হওয়া খাবার অন্ত্রে গ্যাস তৈরি করে। এছাড়াও দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে অন্ত্রে খাদ্য জমে গ্যাস ও ফোলাভাব তৈরি হয়। নারীদের ক্ষেত্রে মাসিক বা মেনোপজের সময় হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণেও জলধারণ হয় এবং পেট ফুলে যাওয়ার অনুভূতি হয়।”

ডাঃ রাজেশ বাথিনী পরামর্শ দেন, যাদের নতুন বা বাড়তে থাকা উপসর্গ রয়েছে — যেমন অনিচ্ছাকৃত ওজন হ্রাস, ক্ষুধামন্দা, ক্লান্তি, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি — তাদের অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ডাঃ জ্ঞানারঞ্জন রাউত বলেন, “জীবনযাত্রার পরিবর্তন, যেমন খাবারের ডায়েরি রাখা, প্রচুর পানি পান, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উপসর্গের কারণ খুঁজে বের করা যায়। তবে যদি এগুলো কাজ না করে, তবে বড় কোনো রোগের কারণ রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।”

অবশ্যই পেট ফোলা সবসময় গুরুতর সমস্যা বোঝায় না। তবে যদি উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী হয় বা এর সঙ্গে অন্যান্য অস্বস্তিকর উপসর্গ দেখা দেয়, তবে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। নিজের শরীরের বার্তা শুনুন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন—কারণ তাতেই রক্ষা পেতে পারেন বড় সমস্যার হাত থেকে।

দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনটি কেবল তথ্যভিত্তিক এবং চিকিৎসা পরামর্শের বিকল্প নয়। শরীর সংক্রান্ত যেকোনো প্রশ্নে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সূত্র: https://l8.nu/-uDg

মিরাজ খান

×