
ছবিঃ সংগৃহীত
শিশুর জন্মের পরপরই তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় শুরু হয়—যেটা তার মস্তিষ্কের গঠন ও বুদ্ধিবিকাশের ভিত্তি গড়ে দেয়। আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞান বলছে, জন্ম থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত সময়টা শিশুর ব্রেন ডেভেলপমেন্টের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের ভেতরেই ঘটে মস্তিষ্কের প্রায় ৯০% বিকাশ।
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এই বয়সকালে শিশুদের মস্তিষ্কে প্রতি সেকেন্ডে এক বিলিয়নেরও বেশি নিউরন কানেকশন তৈরি হয়। তবে এই কানেকশন বা নিউরন ‘ফায়ারিং’ শুধু তখনই সম্ভব, যখন শিশুটি সরাসরি ইন্দ্রিয় ব্যবহার করে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যায়।
জন্মের সময়ই থাকে সব নিউরন, দরকার শুধু সংযোগ
একটি শিশু জন্মের সময়ই মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় নিউরন বা সেলস নিয়ে আসে। কিন্তু এসব সেলস তখন পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় থাকে, যতক্ষণ না তারা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ বা সংযোগ স্থাপন করে। এই সংযোগই মূলত গড়ে তোলে শিশুর শেখার ক্ষমতা, ভাষা, চিন্তাশক্তি এবং সমাধানমূলক বুদ্ধি।
হ্যান্ডস-অন এক্সপেরিয়েন্সই শিশু বিকাশের মূল চাবিকাঠি
শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ নির্ভর করে তার অভিজ্ঞতার উপর। সে যত বেশি করে জিনিস দেখবে, শুনবে, ছুঁবে, গন্ধ পাবে বা স্বাদ নেবে, তত বেশি নিউরন এক্টিভেট হবে এবং একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। উদাহরণস্বরূপ, যখন বাচ্চা কোনো খেলনা হাতে নেয়, তার রং দেখে, শব্দ শুনে, কিংবা গন্ধ নেয়—তখন তার মস্তিষ্কে বহু সংযোগ তৈরি হয়, যেগুলো তার স্মৃতি, বিশ্লেষণ এবং সংবেদনশীলতার ভিত্তি গড়ে দেয়।
মোবাইল এক্সপোজার হতে পারে ব্রেন ডেভেলপমেন্টের বাধা
বর্তমানে অনেক অভিভাবক ছোট বাচ্চাদের হাতে মোবাইল দিয়ে শান্ত রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু গবেষণা বলছে, এভাবে মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে শিশুর মস্তিষ্কে একপাক্ষিক এবং সীমিত নিউরন এক্টিভেশন ঘটে। সে শুধু দেখছে—কিন্তু ছুঁতে পারছে না, গন্ধ নিতে পারছে না, অনুভব করতে পারছে না। ফলে হ্যান্ডস-অন এক্সপেরিয়েন্সের যে বিস্তৃত নিউরন কানেকশন তৈরি হতো, তা আর হচ্ছে না।
কী করতে পারেন অভিভাবকরা
বিশেষজ্ঞদের মতে, ০-৫ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে এই সময়টা যেন ডিজিটাল ডিটক্স এর মতই কাটানো উচিত। তাদের যেন বেশি করে নিজে কিছু করে শেখার সুযোগ দেওয়া হয়। হোক সেটা বালি দিয়ে খেলা, রঙ করা, গাছের পাতা ছুঁয়ে দেখা কিংবা রান্নাঘরে মায়ের সঙ্গে শাকসবজি ধোয়া—এইসব সাধারণ কাজই শিশুর ব্রেন ডেভেলপমেন্টের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
শিশুর বুদ্ধি বা মেধা তৈরি হয় তার জীবনের প্রথম পাঁচ বছরেই। এই সময় তার মস্তিষ্কে যে পরিমাণ নিউরন কানেকশন তৈরি হয়, তা পরবর্তী জীবনের শেখা, ব্যবহারিক বুদ্ধি এবং আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়। তাই এই সময় শিশুকে শুধু স্ক্রিনে আটকে না রেখে, হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা দেওয়াই অভিভাবকের প্রধান দায়িত্ব।
নোভা