
ছবি: সংগৃহীত
কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই জমে উঠছে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় খাইট্টা বিক্রির মৌসুমি বাজার। কোরবানির পশু জবাইয়ের পর মাংস কাটার জন্য প্রয়োজনীয় এই কাঠের গুঁড়ি—স্থানীয় ভাষায় খাইট্টা—এখন উপজেলার হাটবাজার, মোড় ও পাড়া-মহল্লায় চোখে পড়ার মতো দৃশ্য হয়ে উঠেছে।
বিশেষ করে তেঁতুল কাঠের খাইট্টা এবার বেশ চাহিদায়। কারণ এই কাঠের গুঁড়ি দা-ছুরি ব্যবহারে সহজে ক্ষয়ে যায় না, বরং অনেকদিন টিকে থাকে। তাই শুধু পেশাদার কসাই নয়, সাধারণ গৃহস্থরাও খাইট্টা কেনায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
উপজেলার বালুচর বাজার, মালখানগর, কুচিয়ামোড়া, রাজানগর এবং রশুনিয়া ইউনিয়নের বেশ কিছু স্থানে গড়ে উঠেছে এই মৌসুমি খাইট্টার পসরা। বিক্রেতারা কেউ কেউ নিজেরাই স’মিল থেকে তেঁতুল কাঠ কিনে এনে মাপমতো কেটে খাইট্টা তৈরি করছেন।
চিত্রকোট খাশুর বাজারের বিক্রেতা আবুল কাশেম বলেন, ‘প্রতি বছর কোরবানির ঈদ আসলেই খাইট্টার ব্যবসা করি। এবারও স’মিল থেকে তেঁতুল কাঠ কিনে এনে বানাচ্ছি। ছোট সাইজের ২০০ টাকায়, বড় সাইজের ১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি।’
নাজমুল নামের আরেক বিক্রেতা জানালেন, ‘দাম জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে অনেকে। কেউ কেউ কিনেও নিচ্ছে। তবে আগের বছরের মতো ভিড় এখনও হয়নি। ধারণা করছি শেষ দুই দিনে বেচাকেনা জমবে।’
নিমতলা বাজারে এক কসাই বলেন, ‘তেঁতুল কাঠের খাইট্টায় দা বসে না, গুঁড়িও উঠে না। তাই আমরা পেশাদার কসাইরা এই কাঠটাই বেশি নিই।’
তবে খাইট্টার দাম কিছুটা বেড়েছে বলেও জানিয়েছেন অনেক ক্রেতা। আব্দুল্লাহপুর বাজারের এক ক্রেতা বলেন, ‘গত বছর ৩০০ টাকায় যেটা কিনেছিলাম, এবার সেটা ৫০০ চাচ্ছে। দামের একটু টান আছে।’
স’মিল মালিকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, ‘তেঁতুল কাঠের সরবরাহ আগের মতো নেই, তাই দাম একটু বেশি। কিন্তু একবার খাইট্টা কিনলে কয়েক বছর টিকে যায়—এই জন্যই সবাই এই কাঠটাই খোঁজে।’
প্রসঙ্গত, ঈদুল আজহার সময় দেশের অন্যান্য জেলা উপজেলার মতো সিরাজদিখানেও খাইট্টার চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সারা বছর কিছু কসাই এটি ব্যবহার করলেও ঈদের সময় প্রতিটি বাড়িতে এর প্রয়োজন পড়ে। তাই এই সময়ে উপজেলায় খাইট্টা বিক্রেতাদের সরব উপস্থিতি চোখে পড়ে।
সব মিলিয়ে কোরবানির প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সিরাজদিখানে খাইট্টা ব্যবসায় এখন ঈদের আমেজ, যেখানে ঐতিহ্যবাহী কাঠ ব্যবসার সঙ্গে মিলেমিশে তৈরি হচ্ছে মৌসুমি কর্মসংস্থানের সুযোগও।
সালাহউদ্দিন সালমান/রাকিব