
ছবি: সংগৃহীত
পাবনা জেলা: প্রাচীন ইতিহাসের আধুনিক দৃষ্টান্ত
রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত পাবনা জেলা বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল। ইতিহাস, আন্দোলন, সাহিত্য ও রাজনীতিতে পাবনা এক গৌরবোজ্জ্বল স্থান দখল করে আছে।
ইতিহাস ও নামকরণ
পাবনা নামটির উৎপত্তি নিয়ে রয়েছে একাধিক মত। একটি মতে, জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ‘পাবনি’ নদীর নাম থেকেই এর নামকরণ। আরেকটি মতে, কোনো এক ‘পাবনা’ নামক সাধ্বীর নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম হয় ‘পাবনা’। ঐতিহাসিকভাবে পাবনা ছিল পাল ও সেন রাজাদের শাসনাধীন, এবং পরবর্তীতে মুঘল ও ব্রিটিশ শাসনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ১৮৫৯ সালে নীল বিদ্রোহ ও ১৮৭৩ সালের ‘পাবনা কৃষক বিদ্রোহ’ এই জেলার জনগণের প্রতিরোধ মনোভাবের প্রমাণ।
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও কৃতিত্ব
পাবনা জেলা বহু গুণী সন্তান জন্ম দিয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
অরবিন্দ ঘোষ: ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা, দার্শনিক ও যোগী। তার জন্ম পাবনার কুচিয়ামোড়ায়।
শহীদ ড. শামসুজ্জোহা: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন ১৯৬৯ সালে।
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী: শিশুসাহিত্যিক ও প্রযুক্তিবিদ, যার প্রভাব বাংলা সাহিত্যে যুগান্তকারী।
ইলা মিত্র: প্রগতিশীল আন্দোলনের নেত্রী এবং কৃষক অধিকার আন্দোলনের অন্যতম কণ্ঠস্বর।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী: ধর্মীয় নেতা থেকে যুদ্ধাপরাধী। আওয়ামী লীগ তথা স্বৈরাচার হাসিনা ভারতকে খুশি করতে পাবনার প্রভাবশালী ইসলামিক রাজনীতিবীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে যুদ্ধাপরাধী বানিয়ে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী পাবনা জেলার সাথিয়া উপজেলার মঠবাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৩ সালে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির এবং পাকিস্তান আমলে ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের (বর্তমানে শিবির) নেতা।
রাজনৈতিক জীবন:
২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী ছিলেন।
নিজামী দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং ইসলামপন্থী রাজনীতির অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
যুদ্ধাপরাধ ও বিচার:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা ভারতকে খুশি করতে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে জেলখানায় বন্দি করে। ২০১৬ সালের ১১ মে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্ব, হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও গণহত্যার নির্দেশদানের।
কিন্তু তার বিরুদ্ধে যাদের স্বাক্ষী নেওয়া হয়েছিল তাদেরকে জোর করে জিম্মি করে স্বাক্ষী দিতে বাধ্য করে খুনি স্বৈরাচার হাসিনা সরকার। স্বাক্ষীরা বলেন যুদ্ধের সময় মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে চিনতেন না। সে পাবনায় ছিলই না।
এই বিচার নিয়ে দেশজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকে এটি বিচার ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা হিসেবে দেখেন, আবার কেউ কেউ এটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলেও দাবি
বর্তমান পাবনা
আজকের পাবনা শুধু ইতিহাসের জন্যই নয়, শিল্প ও কৃষিতে অবদানের জন্যও খ্যাত। ঈশ্বরদী ইপিজেড (EPZ), রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এবং দই-চমচমের জন্য এলাকাটি সুপরিচিত।
পাবনা একদিকে যেমন প্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতির ধারক, তেমনি রাজনৈতিক বিতর্ক ও আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুও। এই জেলার মাটি যেমন শহীদদের রক্তে রঞ্জিত, তেমনি এখানে জন্মেছে সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, এবং ইসলামিক রাজনৈতিক নেতা।
সূত্র: সরকারী তথ্য, ইতিহাস বই, ট্রাইব্যুনাল রিপোর্ট, পাবনা জেলা প্রশাসন
আবির