
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে বিধিনিষেধ আরোপ করে যেন নিজেদেরই বিপদে ফেলেছে ভারত। ঢাকাকে চাপে ফেলতে মোদি সরকারের নেওয়া করাকরির সিদ্ধান্ত এখন রীতিমতো বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে ভারতের সাধারণ ব্যবসায়ী, দিনমজুর, ট্রাক চালকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের উপর। ধস নেমেছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সেভেন সিস্টার্স রাজ্য এবং পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে।
মঙ্গলবার (৩ জুন) এই পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য ওয়্যার। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যিক উত্তেজনার ফলে ভারতীয়দের ওপর যে প্রভাব পড়েছে তা গভীরভাবে অনুধাবনযোগ্য। কিছুদিন আগেই ভারত সরকার বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বেশ কিছু পণ্য স্থলপথে আমদানি নিষিদ্ধ করে। নির্দিষ্ট করে বলা হয়, বাংলাদেশ আর উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্য ও পশ্চিমবঙ্গের স্থল সীমান্ত দিয়ে এসব পণ্য পাঠাতে পারবে না। এখান থেকেই সংকটের সূচনা।
এই সিদ্ধান্তের ফলে পশ্চিমবঙ্গের পেট্রোপোল, হিলি, মাহাদীপুর, চ্যাংড়াবান্ধা এবং ফুলবাড়ি স্থলবন্দরগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। দ্য ওয়্যার-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বন্দরগুলো এখন জনমানবহীন বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। আগে যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ ট্রাক আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন করতো, এখন তা নেমে এসেছে সপ্তাহে ২০০-এর নিচে। এ অবস্থায় পণ্য বিক্রি করতে না পেরে অনেক ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন, অনেক দিনমজুর পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে দুই দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বসবাসরত প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার শ্রমিকের রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে দিনমজুর, ট্রাকচালক, পণ্য খালাসকারীসহ আরও অনেকেই। শুধু কর্মসংস্থান নয়, এর প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক সরবরাহ ব্যবস্থাতেও। এখন স্থলপথের পরিবর্তে ঘুরপথে, অতিরিক্ত ৮ থেকে ১০ দিন সময় নিয়ে ভারত পৌঁছাচ্ছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক। ফলে ভারতের বাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে আকাশচুম্বী হারে।
দ্য ওয়্যার, হিন্দুস্তান টাইমসসহ একাধিক গণমাধ্যমের তথ্যমতে, গত ১০ মাসে ভারত-বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত দিয়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এর বড় অংশটাই গেছে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে, বিশেষ করে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে চাহিদা ছিল ব্যাপক। এখন এই নিষেধাজ্ঞার ফলে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে বাংলাদেশি পোশাকের যোগান কমে যাবে, যা বাড়িয়ে দেবে পোশাকের দাম। এতে ভোগান্তিতে পড়বেন মূলত নিম্ন আয়ের মানুষজন, যাদের এক বড় অংশই ছিলেন বাংলাদেশের সাশ্রয়ী মূল্যের পোশাকের উপর নির্ভরশীল।
এই পরিস্থিতিতে অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক স্বার্থে নেওয়া এই বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত ভারতের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে একপ্রকার আত্মঘাতী ধাক্কা দিয়েছে। আর এর সরাসরি মূল্য দিচ্ছে সীমান্ত এলাকার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।
ফরিদ