
ছবিঃ সংগৃহীত
গাজায় পাঁচ বছরের নিচে ২,৭০০-এর বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে বলে জাতিসংঘ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। মে মাসের শেষার্ধে করা সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, অপুষ্টির কারণে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হওয়া শিশুদের সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা (OCHA) জানিয়েছে, মে মাসে ৪৭ হাজারের বেশি শিশুকে পর্যবেক্ষণ করা হয়, যার মধ্যে ৫.৮ শতাংশ বা ২,৭৩৩ জন শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। এই হার ফেব্রুয়ারির তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি।
প্রতিবেদন অনুসারে, জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ১৬,৫০০-এরও বেশি শিশুকে তীব্র অপুষ্টির চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৪১ জন শিশুর জটিল অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়েছে।
তবে উদ্বেগজনকভাবে, গাজা উপত্যকায় মাত্র চারটি স্ট্যাবিলাইজেশন সেন্টার বা চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে, যেখানে এই ধরনের জটিল অপুষ্টির চিকিৎসা সম্ভব। উত্তর গাজা ও রাফাহ অঞ্চলের কেন্দ্রগুলো কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে, ফলে সেইসব এলাকার শিশুদের জরুরি চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ আর নেই।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ-এর একজন মুখপাত্র গাজায় শিশুদের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিকে ‘চরম হতবাক করার মতো’ বলে বর্ণনা করেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) গাজা অঞ্চলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংসের মুখে বলে সতর্ক করেছে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজার গুরুত্বপূর্ণ নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স এবং আল-আমাল হাসপাতাল অচল হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
WHO জানিয়েছে, "গাজায় হাসপাতাল ধ্বংসের ধারাবাহিকতা দীর্ঘদিন ধরে চলছে, যা এখনই বন্ধ করতে হবে। আমরা নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স এবং আল-আমাল হাসপাতালকে নিরাপদ ও সচল রাখার জন্য জরুরি সুরক্ষার আহ্বান জানাচ্ছি।"
WHO আরও বলেছে, "রোগীরা যখন হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করছে, তখন তাদের জীবন হারানোর ঝুঁকি থাকা চলতে পারে না।"
জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সংস্থা ও গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী বারবার স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। তারা এটিকে এমন একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা বলে বর্ণনা করছেন, যা গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণের জীবনযাপনকে অবাসযোগ্য করে তুলছে।
১১ মাস বয়সী জাকারিয়া আল-মাজদুব গাজার খান ইউনিসে জন্মগ্রহণ করেন এবং বর্তমানে মাত্র ৪ কেজি ওজন নিয়ে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তাঁর জীবন চরম ঝুঁকিতে পড়েছে।
বিশ্বজুড়ে মানবিক সংস্থাগুলো গাজায় ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। “একটি শিশু অপুষ্টিতে মারা যাওয়া মানেই আমাদের ব্যর্থতা।” — UNICEF মুখপাত্র
এই সংকটের অবসানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের এখনই কার্যকর ও মানবিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
সূত্রঃ আল জাজিরা
নোভা