
ছবি: সংগৃহীত
পাহাড় হরিদ্রা পেশায় একজন জেলে। দুটি গরু কিনে লালন-পালন করেছিল কোরবানি ঈদের হাটে কিছুটা ভালো দাম পাওয়ার আশায়। কিন্তু হাটে এসে দেখেন, কোরবানি পশুর কোনো ঘাটতি নেই। গোটা হাটজুড়ে পশু উঠেছে, কিন্তু ক্রেতার অভাব চলছে। এ ঘটনা ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার হামিরদী ইউনিয়নের মুনসুরাবাদ স্থায়ী পশুর হাটের।
হরিদ্রা জেলের মতো আরও গরুর খামারি ও স্থানীয় গরুর মহাজনেরা গরুর আতালে পাশে দাঁড়িয়ে ক্রেতার অপেক্ষায়। চলতি বছর ভাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন সরকারিভাবে সংরক্ষিত ৫টি স্থায়ী গরুর হাটে কোরবানি পশু বিক্রয়ের উপযোগী হিসেবে অনুমতি দিয়েছে। এর বাইরে আর কোনো পশুর হাট মিলতে দেওয়া হয়নি।
কোরবানি ঈদের আর মাত্র একদিন বাকি। ঈদের শেষ মুহূর্তে বৃহস্পতিবার ছিল মুনসুরাবাদ হাটে কোরবানি পশুর বিক্রির শেষ হাট। কিন্তু এ হাটে গরু ও ছাগলের বেশ আমদানি দেখা গেছে। ভাঙ্গা উপজেলার বাইরে বিভিন্ন জেলা থেকে গরুর মহাজন ও ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পরিবহণে গরু ও ছাগল বিক্রি করতে এনেছেন। অনেক রাত অবধি চলে পশুর হাট। এতে উপকৃত হন দূর-দূরান্ত থেকে কোরবানি পশু কিনতে আসা ক্রেতারা।
মুনসুরাবাদ ছাড়াও কালামৃধা ইউনিয়নের দেওড়া বাজার ও মালিগ্রাম, ঝাটুরদিয়াসহ বেশ কয়েকটি পশুর হাটে কোরবানি ঈদের গরু ও ছাগল বিক্রি হয়েছে প্রচুর। তবে দাম ক্রেতার নাগালে থাকায় রেকর্ডসংখ্যক কোরবানি পশু বিক্রি হয়েছে এসব হাটে।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, কোরবানির পশু বিক্রি করতে আসা কৃষক পরিবার ও মহাজন মালিকদের হতাশার কথা। তাদের কারও কারও বক্তব্য—এবার ঈদুল আজহায় হাসির ফোঁটা ফুটে উঠেছে ক্রেতাদের মুখে। ক্রেতারা চাহিদার তুলনায় অল্প দামে কাঙ্ক্ষিত কোরবানির পশু ক্রয় করে ঘরে ফিরছেন। সেখানে একজন গৃহস্থ বা পশুর খামার মালিক সঠিক দাম না পেয়ে বুকে কষ্টের পাথর চেপে ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছে।
খামারিদের মতে, হাটে যেভাবে গরু ও ছাগলের আমদানি হয়েছে, সেই হারে কোরবানি পশু বিক্রি করতে পারলে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই লাভবান হতে পারতেন। কিন্তু সে আশাটা ক্ষীণ হওয়ায় স্থানীয় গরুর মহাজন ও কৃষক পরিবারগুলো সন্ধ্যা নামতেই গরু ও ছাগল নিয়ে বাড়ি ফেরত গেছেন।
আলগী ইউনিয়নের হালিম মাতুব্বর বলেন, বাড়ির পাশের জনৈক মহিলার কাছ থেকে চারটি ছাগলের বাচ্চা কিনে বড় করেছিল বিবি-বাচ্চারা। ভেবেছিলাম ছাগল বিক্রির টাকায় পরিবারের লোকজনের ঈদের কেনাকাটা করতে পারব। কিন্তু পশুর হাটের যে বেহাল অবস্থা, গরুর দামই উঠছে না, সেখানে ছাগল বিক্রি করব কীভাবে?
ভাঙ্গা পৌর এলাকার ব্যবসায়ী লালন মিয়া বলেন, মহল্লার সাতটি পরিবার মিলে একটি পশু কোরবানি দেওয়ার নিয়তে মুনসুরাবাদ পশুর হাটে এসেছিলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল ২ লাখ টাকার মধ্যে কোরবানির পশু কেনা। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, সেখানে পৌনে দেড় লাখ টাকায় আমাদের চাহিদা পূরণ হয়েছে। তার মতে, প্রতি বছর কোরবানি পশুর হাটগুলোতে শেষ সময়ে দাম চড়াও হয়ে ওঠে, কিন্তু এ বছর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।
হাট মালিক পক্ষের ইজারাদার বাহাউদ্দীন জিতু মুন্সী বলেন, বছরের দুটো ঈদের সময়ে সাধারণত একটু ভালো কেনাবেচা হবে—আমরা এটাই প্রত্যাশা করি। পশু বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সুবিধার্থে হাট এলাকায় নির্বিঘ্নে কেনাবেচার জন্য সকল ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে শেষ মুহূর্তে মুনসুরাবাদ হাটের পরিস্থিতি দেখে নিজেরাও কিছুটা হতাশ, যদিও তিনি আশাবাদী—রাতের বেলায় হাট থাকায় হাটের ক্রেতা, বিক্রেতা ও ইজারাদারদের মুখে হাসি ফুটবে।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে গরুর হাট ও জনগণের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ভাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, রাতের বেলায় কোরবানি পশুর হাট এলাকায় পুলিশ সদস্যরা টহল ও পর্যায়ক্রমে সার্বিক নিরাপত্তায় সচেষ্টভাবে কাজ করছে।
আসিফ