ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঈদ-উল-আযহার টানা দশ দিনের ছুটিতে পর্যটক বরণের প্রস্তুতি কক্সবাজারে

ইমতিয়াজ মাহমুদ ইমন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কক্সবাজার

প্রকাশিত: ০১:০৬, ৫ জুন ২০২৫

ঈদ-উল-আযহার টানা দশ দিনের ছুটিতে পর্যটক বরণের প্রস্তুতি কক্সবাজারে

ঈদুল ফিতরের পর ঈদুল আজহাতেও টানা ১০ দিনের ছুটি। কোরবানির ঈদেও সপ্তাহের বেশি বেড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবীরা। ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত পর্যটক সমাগম বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

আগামী ৫ জুন (বৃহস্পতিবার) থেকে ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হচ্ছে। এরপর ৬-৭ দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি। ৮, ৯ ও ১০ জুন ঈদুল আজহার বন্ধ। পরের বুধ-বৃহস্পতিবার (১১-১২ জুন) খোলা থাকার কথা ছিল। এরপর শুক্র-শনি সাপ্তাহিক ছুটি। তাই মাঝের বুধ-বৃহস্পতিবার কোরবানির বিশেষ ছুটিতে ঢুকিয়ে আগের দুই সপ্তাহের দুই শনিবার সরকারি অফিস-আদালত খোলা রাখা হয়। এভাবেই ঈদুল আজহা ১০ দিনের ছুটির ফাঁদে ফেলেছে সবাইকে।

তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল বলেন, ঈদুল আজহায় ১০ দিন ছুটি মিললেও কক্সবাজারের পর্যটন জমবে মাত্র পাঁচদিন। কেননা ৫-৬ জুন কোরবানির পশু কেনায় ব্যস্ত থাকবেন লোকজন। ঈদের দিন তো বাসায় সময় কাটাবেন। ঈদের পরেরদিন মেহমান সামলাতে হবে অনেককে। এজন্য বাইরে বের হওয়া সম্ভব হবে না তাদের। ৯ জুন থেকে বেড়াতে বের হবেন ভ্রমণকারীরা। সেভাবেই কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল বুকিং হচ্ছে।

তিনি জানান, ৯-১৩ জুন কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম বাড়বে। এরইমধ্যে তারকা হোটেলগুলোতে ৫-৮ জুনের জন্য রুম বুকিং নেই বললেই চলে। তবে, ৯-১৩ জুনের বুকিং আসছে বেশি। এসময় ৮০-৯০ শতাংশ বুকিং হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট ক্লাব ও ট্যুরস অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সভাপতি মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ভ্রমণকালে ভোগান্তি এড়িয়ে নিরাপদ অবকাশ যাপনে পছন্দের হোটেল-মোটেল-কটেজে আগাম বুকিং দেন পরিচ্ছন্ন ভ্রমণপিয়াসীরা। ঈদুল আজহাতেও তেমনটি হচ্ছে। বৃষ্টি-রোদের খেলায় কোরবানির ঈদেও পর্যটন ব্যবসা চাঙা হওয়ার ইঙ্গিত পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। সবার লক্ষ্য পর্যটকদের শতভাগ সেবা নিশ্চিত করা।

এদিকে, পর্যটকদের ভিড় সামলানো ও ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলা প্রশাসন ও পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অতীতে কোরবানির ঈদে ১০ দিন ছুটির নজির নেই দেশে। তবে, ঈদুল ফিতরে ১১ দিন সরকারি ছুটির শেষ পাঁচদিনে কক্সবাজার সৈকত ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ১০-১২লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। সেই চিন্তা মাথায় নিয়ে ঈদুল আজহার লম্বা ছুটিতেও দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড় বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাফিস ইনতেসার নাফি বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গত ২০ মে প্রস্তুতিমূলক সভা হয়। সভায় ঈদের ছুটিতে যানবাহনে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কক্সবাজারে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে অতিরিক্ত ভাড়া না নেয় এবং রেস্তোরাঁয় খাবারের মূল্যতালিকা টাঙানোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ অতিথি বরণে হোটেল-মোটেল গোছানো এবং সবকিছুতেই বাড়তি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। জেলা সদরের বাইরে হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, মহেশখালী, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, রামুর স্বপ্নতরীসহ জেলার সব পর্যটন স্পটগুলোকে ইজারাদাররা গুছিয়ে নিচ্ছেন।

হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, পর্যটক বরণে আমরা প্রস্তুত। পর্যটকদের বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিতে আমরা চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

শহর ও আশপাশের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট-গেস্ট হাউজে দেড় লক্ষাধিক পর্যটক রাতযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান হোটেল-মোটেল অফিসার্স এসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম। তিনি বলেন, এখন হোটেল কক্ষ ভাড়ায় ৫০-৬০ শতাংশ ছাড় চললেও ঈদের ছুটিতে বেশি ছাড় থাকবে না।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে টানা ছুটিতে কক্সবাজার সৈকতে বিপুল পর্যটক সমাগম ঘটবে আশা করে নিরাপত্তা বলয় তৈরি হচ্ছে। কোরবানির লম্বা ছুটিতে পর্যটক নিরাপত্তায় অতিরিক্ত ফোর্স মাঠে থাকবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পূর্বের মতো পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতেও কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম বাড়বে আশা করা যায়। তাদের ভ্রমণ আরামদায়ক করতে নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিতে সবধরনের পদক্ষেপ নিতে শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মুমু

×