ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মন্ত্রণালয়ের নোটিশের পর থেকে বন্ধ রয়েছে পাবনার চিনিকল

হৃদয় হোসাইন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, পাবনা

প্রকাশিত: ০০:৫৩, ৫ জুন ২০২৫

মন্ত্রণালয়ের নোটিশের পর থেকে বন্ধ রয়েছে পাবনার চিনিকল

লোকসানের পরিমাণ বাড়তে থাকায় ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয় বন্ধের নোটিশ দেয়। এরপর থেকেই আখমাড়াই বন্ধ হয়ে যায় পাবনার ঈশ্বরদীর চিনিকল। পাঁচ বছর বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে চিনিকলের যন্ত্রপাতি সম্পদ। 

ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া এলাকায় ৬০ একর জমির উপর ১৯৯২ সালের ২৭ ডিসেম্বর স্থাপিত হয় পাবনা সুগার মিল। সে আমলে ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মিলটি ১৯৯৭-৯৮ মাড়াই মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। পরের মাড়াই মৌসুম থেকেই চালু হয় কারখানাটি। মিল প্রতিষ্ঠার পর এলাকায় ব্যাপকভাবে শুরু হয় আখ চাষ। ঝোপঝাড় লতাপাতায় ঘিরে ধরছে আখ পরিবহনের শতাধিক যানবাহন। কোটি টাকার যন্ত্রপাতিগুলো রোদ বৃষ্টিতে মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে। মিলটিতে স্থায়ী,অস্থায়ী ও মৌসুমভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ২০০ জন। সুগারমিল এখন নীরব ও জনশূণ্য। 

প্রবেশ পথের পাশেই সাইনবোর্ডের ভগ্নদশা। ভেতরে গার্ড আর প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া কেউই তেমন আসেন না। জানা যায়, সরকারি অর্থায়নে ২০১৮ সালে চিনি কলটিতে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ব্যয় ধরা হয় ৮ কোটি টাকা। ২০২০ সালে চিনি কলটি বন্ধ হওয়ার তিন মাস আগে শুরু হয় ইটিপির নির্মাণকাজ। আনা হয় যন্ত্রপাতি। চিনি কল বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে ইটিপির নির্মাণকাজও বন্ধ। বর্তমানে ইটিপির জন্য আনা যন্ত্রপাতি গুদামেই নষ্ট হচ্ছে। জানা যায়, মিলটির প্রায় ৭০০ কোটি টাকা দেনা রয়েছে। এ চিনি কলের ১০টি আখ উৎপাদন জোন ছিল। বন্ধ হওয়ার পর চারটি জোনকে পার্শ্ববর্তী নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে বাকি ছয়টি জোনকে নাটোর চিনি কলের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে আট জোনেরই আখ উৎপাদন স্থগিত হয়ে গেছে। 

আখমাড়াই প্ল্যান্টসহ চিনি কলে প্রায় ৮০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রয়েছে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার পথে। মিলটির কাঁদে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার সুদ যুক্ত ব্যাংক লোন এর বোঝা। সে সময় জেলা আখচাষি কল্যাণ সমিতি গঠন করা হয়েছিল। চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষি ফেডারেশনের নানামুখী আবেদন ও আন্দোলনের পরও পাবনা চিনিকল চালু করেনি শিল্প মন্ত্রণালয়। পুনরায় চালু হওয়ার ব্যাপারে কারো ও কাছে কোনো তথ্য নেই। জেলার ৯ উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কৃষক মিলে আখ সরবরাহ করতো। চিনি কল বন্ধের পর এ এলাকার কৃষকরা আখ চাষ বন্ধ করে দিয়েছে। ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মানুষগুলোও ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন।

মুমু

×