ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কুড়িগ্রামে কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতার সঙ্কট, হতাশ বিক্রেতারা

রফিকুল ইসলাম রফিক, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ০১:২৪, ৫ জুন ২০২৫

কুড়িগ্রামে কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতার সঙ্কট, হতাশ বিক্রেতারা

ঈদুল আযহা যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে কুড়িগ্রামের কোরবানির পশুর হাটে বিক্রেতাদের দুশ্চিন্তা। জেলার ৯টি উপজেলা ও ৩টি পৌরসভায় বসা ২৯টি হাটে গরুর সরবরাহ থাকলেও ক্রেতার উপস্থিতি খুবই কম। এতে করে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
জেলায় পশুর সরবরাহ বিপুল, তবে কেনাবেচা হতাশাজনক ।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কুড়িগ্রামে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার গবাদি পশু। জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় সরবরাহ করার সুযোগ থাকলেও এখনো বাজারে বিক্রি নেই বললেই চলে।


জেলার ২৯টি হাটের মধ্যে ১৫টি স্থায়ী ও ১৪টি অস্থায়ী। প্রতিটি হাটেই গরুর স্তুপ দেখা গেলেও প্রকৃত ক্রেতা হাতে গোনা। অনেকেই একাধিকবার হাটে গরু নিয়ে এসে খালি হাতে ফিরছেন।
কুড়িগ্রাম সদরের কাঁঠালবাড়ী, কৃষ্ণপুর ও বজরা হাটে প্রচুর গরু উঠলেও বেচাকেনা মন্থর। সদর উপজেলার বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও এখনো লোকজন গরু দেখতে আসেন বেশি, কিনেন কম।


নাগেশ্বরী ও পৌর এলাকা জেলার অন্যতম বড় পশুর হাট নাগেশ্বরীতে প্রতিদিনই গরুর চাপে ঠাসা, কিন্তু দাম কম হওয়ায় বিক্রেতারা নাখোশ। স্থানীয় ব্যবসায়ী জয়নাল বেপারী বলেন, “যে দাম চাচ্ছি, তার ১০-১৫ হাজার কম বলছে ক্রেতারা।”
ভুরুঙ্গামারী এখানেও একই অবস্থা। চালানভিত্তিক বিক্রির আশায় বসে থাকা ব্যবসায়ীরা হতাশ। বিক্রেতা আশরাফ আলী বলেন, “আমার গরুতে লোকসান গুনতে হবে মনে হচ্ছে।”
চিলমারী উপজেলার চরাঞ্চল থেকে আনা গরুগুলোও অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। দরদাম একেবারেই নেমে এসেছে বলে জানান স্থানীয় বিক্রেতারা।
উলিপুর ও পৌরসভা হাটে গরুর সংখ্যা প্রচুর, কিন্তু বড় গরুর বিক্রি প্রায় নেই বললেই চলে। ছাগলের বাজার কিছুটা সক্রিয়, ছোট ও মাঝারি ছাগল কিছুটা বিক্রি হচ্ছে।
ফুলবাড়ী এখানে সীমান্তঘেঁষা এলাকা থেকে আনা গরু তুলনামূলক সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু লোকজন এখনো দেরিতে কেনার মনোভাবেই রয়েছে।
রৌমারী ও রাজীবপুর, সীমান্তবর্তী হাট হওয়ায় সাধারণত চাহিদা থাকে, তবে এবছর নিম্নআয়ের মানুষেরা গরু না কিনে ভাগে কোরবানির দিকে ঝুঁকছেন।
রাজীবপুর, খালপাড়, চরপাড়া এলাকায় মোবাইল হাট বসলেও খুব একটা বিক্রি নেই। অনেকে বাধ্য হয়ে গরু ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন।


নাগরপুর (পৌরসভা),ছাগলের বাজার ভালো থাকলেও গরুর বাজারে অচলাবস্থা। বিক্রেতারা ঈদের দুই-এক দিন আগে কিছু বিক্রি হবে এমন আশায় বসে আছেন।
ভেটেরিনারি টিম সক্রিয়, নজরদারি কড়া, জেলায় ২৮টি ভেটেরিনারি টিম প্রতিদিন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টিকা, এবং স্টেরয়েডমুক্ত পশু নিশ্চিত করতে মাঠে রয়েছে পশু চিকিৎসক দল। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, “প্রতিটি হাটে নিয়মিত টহল ও পরীক্ষার মাধ্যমে নিরাপদ পশু নিশ্চিত করা হচ্ছে।”


বাজার ব্যবস্থাপনায় উদ্ভাবন নেই, বাড়ছে ক্ষতির শঙ্কা, বিক্রেতারা বলছেন, এবার হাট ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনের নজরদারি থাকলেও নেই কোনো উদ্ভাবনী উদ্যোগ। মোবাইল অ্যাপ বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে হাট চালু হলে কিছুটা বিক্রির সুযোগ থাকত বলে মত ব্যবসায়ীদের।
শেষ মুহূর্তে বিক্রির আশায় বসে আছেন বিক্রেতারা, যদিও বাজার এখনো ধীর গতির, তবে সবাই অপেক্ষায় আছেন, শেষ তিন দিনের জন্য। বিক্রেতারা মনে করছেন, শেষ মুহূর্তে যদি কিছু বিক্রি হয়, তাহলে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা যাবে।
 

Jahan

×