
বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকট একটি বহুল আলোচিত এবং জটিল বিষয়, যা কেবল স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (GDP) বা স্টক মার্কেটের সূচককেই প্রভাবিত করে না, বরং এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে আমাদের তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থানের ওপর। একটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার যুব শক্তির ওপর, তাদের কর্মদক্ষতা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং সমাজের প্রতি তাদের অবদানের ওপর। অথচ, যখনই অর্থনৈতিক মন্দা বা সংকট আসে, প্রথমেই আঘাত আসে তরুণদের ওপর, যারা সবেমাত্র নিজেদের কর্মজীবন শুরু করার স্বপ্ন দেখছে। আমার মতে, এই বিষয়টি কেবল অর্থনীতির একটি সমস্যা নয়, এটি একটি গভীর সামাজিক এবং মানবিক সংকট, যা আমাদের সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে।
অর্থনৈতিক সংকটের কারণ ও প্রভাব
অর্থনৈতিক সংকট বলতে আমরা সাধারণত বুঝি একটি দেশের অর্থনীতিতে মন্দা, উচ্চ বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, উৎপাদন হ্রাস, বিনিয়োগে স্থবিরতা এবং আর্থিক বাজারের অস্থিতিশীলতা। এর কারণগুলো জটিল এবং বহুবিধ। বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দা, যেমন ২০০৮ সালের আর্থিক সংকট বা সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ মহামারী, বহু দেশকে প্রভাবিত করেছে। কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক নতুন ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে, যা সরবরাহ চেইনকে ব্যাহত করেছে, মুদ্রাস্ফীতিকে আকাশচুম্বী করেছে এবং অনেক দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর করেছে। ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, যেমন- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দামে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে। অপর্যাপ্ত সরকারি নীতি, যেমন- অপরিকল্পিত ব্যয়, উচ্চ করের হার বা বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশের অভাবও অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে। আর্থিক খাতের দুর্বলতা, যেমন- ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতা বা ঋণ খেলাপি বৃদ্ধি, সংকটকে আরও ত্বরান্বিত করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনও কৃষি উৎপাদন, অবকাঠামো এবং অর্থনীতির অন্যান্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে সংকটকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
এই সংকটগুলোর সবচেয়ে বড় শিকার হয় তরুণ প্রজন্ম। বিশেষ করে যারা সদ্য উচ্চশিক্ষা শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে চাইছেন তারা। তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হয়ে আসে এবং বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো আরও প্রকট হয়। অর্থনৈতিক মন্দার সময় কোম্পানিগুলো নতুন নিয়োগ কমিয়ে দেয় বা কর্মী ছাঁটাই করে। ফলে বেকারত্বের হার বেড়ে যায়। তরুণদের জন্য, যাদের কাজের অভিজ্ঞতা কম, তাদের জন্য কাজ খুঁজে পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এটি একটি দুষ্ট চক্র তৈরি করে। যেখানে অভিজ্ঞতার অভাবে তারা কাজ পান না এবং কাজ না পাওয়ার কারণে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন না।
উচ্চশিক্ষিত তরুণদের মধ্যে আন্ডার-এমপ্লয়মেন্ট একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর অর্থ হলো- তারা তাদের যোগ্যতার তুলনায় নিম্নমানের কাজ করতে বাধ্য হন। একজন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েটকে যদি একটি সাধারণ প্রশাসনিক কাজ করতে হয়, তবে তা তার মেধা এবং দক্ষতার সঠিক ব্যবহারকে বাধাগ্রস্ত করে। এতে কেবল তার ব্যক্তিগত হতাশা বাড়ে না, বরং দেশের মানবসম্পদেরও অপচয় হয়।
সীমিত সংখ্যক পদের জন্য প্রচুর সংখ্যক প্রার্থীর তীব্র প্রতিযোগিতা তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানকে আরও কঠিন করে তোলে। শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে শ্রমবাজারের চাহিদার মধ্যে অমিলও একটি বড় সমস্যা। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অনেক সময় আধুনিক শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা প্রদানে ব্যর্থ হয়, যার ফলে তরুণরা শ্রমবাজারে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন না।
অর্থনৈতিক সংকটের সময় নতুন ব্যবসা শুরু করার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যার ফলে তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। মূলধন সংগ্রহ করা এবং বাজারে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, দীর্ঘমেয়াদি বেকারত্ব বা অনিশ্চিত কর্মসংস্থান তরুণদের মধ্যে মানসিক চাপ, হতাশা এবং উদ্বেগের কারণ হতে পারে। এটি তাদের সামগ্রিক সুস্থ জীবনযাপনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং সমাজের স্থিতিশীলতাকেও হুমকির মুখে ফেলে।
এই পরিস্থিতি দেশের মেধা পাচার (ইৎধরহ উৎধরহ)-কেও ত্বরান্বিত করছে বলে মনে করি। যখন দেশের ভেতরে পর্যাপ্ত সুযোগ থাকে না, তখন মেধাবী তরুণরা উন্নত কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হন। এটি দেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। কারণ মানবসম্পদই একটি দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।
সমাধানে সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য
এই জটিল সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প এবং সমাজের প্রতিটি স্তরের সমন্বিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরা হলো-
১. দক্ষতা উন্নয়ন ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণে জোর : আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে অবশ্যই শ্রমবাজারের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করতে হবে। গতানুগতিক ডিগ্রির বাইরে গিয়ে তরুণদের আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষতা যেমন- ডেটা অ্যানালাইসিস, ডিজিটাল মার্কেটিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং, ব্লকচেইন প্রযুক্তি, কোডিং এবং সাইবার সিকিউরিটিতে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এই দক্ষতাগুলো চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য অত্যাবশ্যক।
সরকার এবং বেসরকারি খাত মিলে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (ঠড়পধঃরড়হধষ ঞৎধরহরহম ঈবহঃবৎং) স্থাপন করে হাতে-কলমে শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে পারে। এর মধ্যে শিল্পভিত্তিক শিক্ষানবিস কর্মসূচি (অঢ়ঢ়ৎবহঃরপবংযরঢ় ঢ়ৎড়মৎধসং) অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, যেখানে তরুণরা কাজ করতে করতে শিখবে। এই ধরনের প্রোগ্রাম বাস্তবসম্মত অভিজ্ঞতা প্রদান করে, যা নিয়োগকর্তাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। এছাড়াও, কর্মীদের জন্য লাইফ-লং লার্নিং (খরভব-ষড়হম খবধৎহরহম) এর সুযোগ তৈরি করা উচিত, যাতে তারা পরিবর্তিত শ্রমবাজারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং নতুন দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
২. উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সমর্থন : আমাদের সমাজে কেবল চাকরিজীবী তৈরি করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন তৈরি করতে হবে। তাদের সে স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। সরকারের উচিত তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ এবং সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা করা। স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করতে ইনকিউবেটর এবং এক্সিলারেটর প্রোগ্রাম চালু করা যেতে পারে, যা নতুন উদ্যোগগুলোকে প্রাথমিক পর্যায়ে সহায়তা করবে।
অভিজ্ঞ উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে তরুণদের জন্য মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালু করা, যাতে তারা ব্যবসা শুরু করার এবং পরিচালনার কৌশল শিখতে পারে, অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (ঝগঊ) খাতকে শক্তিশালী করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ এই খাতই কর্মসংস্থান সৃষ্টির সবচেয়ে বড় উৎস। এই খাতকে প্রণোদনা, কর সুবিধা এবং সহজ আর্থিক সহায়তা দিয়ে শক্তিশালী করা সম্ভব।
৩. কর্মসংস্থানমুখী সরকারি নীতি এবং বিনিয়োগ : সরকারকে অবশ্যই এমন নীতি গ্রহণ করতে হবে যা কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক। অবকাঠামো উন্নয়ন, যেমন- সড়ক, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিগত খাতে বিনিয়োগ বাড়ালে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এছাড়াও, সবুজ অর্থনীতি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং পরিবেশবান্ধব শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো যেতে পারে, যা ভবিষ্যতের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় এবং অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন, যা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে। এর মধ্যে সহজ করনীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করা অপরিহার্য। শ্রম আইনকে আধুনিকায়ন করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ তৈরি করাও জরুরি।
৪. ডিজিটাল অর্থনীতির সদ্ব্যবহার : ফ্রিল্যান্সিং এবং গিগ ইকোনমি তরুণদের জন্য অসীম সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। সরকার ডিজিটাল অবকাঠামো যেমন - দ্রুতগতির ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের সম্প্রসারণ করে গ্রামীণ এলাকাতেও ডিজিটাল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারে। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য আইনি সহায়তা, ট্যাক্স সুবিধা এবং সঠিক প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করা উচিত। অনলাইন মার্কেটপ্লেস এবং ই-কমার্সের বিস্তারও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।
৫. সামাজিক নিরাপত্তা জাল ও মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা : বেকারত্ব বা কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা তরুণদের মধ্যে হতাশা, উদ্বেগ এবং মানসিক চাপ তৈরি করে। এই পরিস্থিতিতে তাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা এবং কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। সাময়িক বেকারদের জন্য বেকার ভাতা বা প্রশিক্ষণকালীন সহায়তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যা তাদের কঠিন সময়ে টিকে থাকতে সাহায্য করবে এবং নতুন দক্ষতা অর্জনে উৎসাহিত করবে।
৬. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও গবেষণা : বিভিন্ন দেশের মধ্যে জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান করে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় কার্যকর কৌশল প্রণয়ন করা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্রমবাজারের প্রবণতা এবং তরুণদের চাহিদার ওপর নিয়মিত গবেষণা করে সেই অনুযায়ী নীতি ও প্রোগ্রাম তৈরি করা উচিত।
ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ
অর্থনৈতিক সংকট এবং তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থান একটি জটিল আন্তঃসম্পর্কিত সমস্যা। এই সংকট মোকাবিলায় কেবলমাত্র অর্থনৈতিক পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়, বরং শিক্ষা, সামাজিক নীতি, এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে সমন্বিত একটি বহুমুখী কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন। তরুণ প্রজন্ম একটি দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা এবং তাদের মধ্যে দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা কেবল তাদের ব্যক্তিগত জীবনকেই প্রভাবিত করবে না, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও অপরিহার্য।
এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় আমরা যদি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করি, দূরদর্শী নীতি প্রণয়ন করি এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করি, তাহলে এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব বলে মনে করি। তরুণদের মধ্যে আশা ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে, তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আজ আমরা তরুণদের জন্য যে বিনিয়োগ করব, সেটাই আগামী দিনের সমৃদ্ধ এবং স্থিতিশীল একটি জাতির ভিত্তি তৈরি করবে। তাদের বেকারত্বের বোঝা থেকে মুক্তি দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা, তাদের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানো এবং তাদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার সাহস সঞ্চার করা- এইগুলোই হতে পারে আমাদের আগামী দিনের অগ্রযাত্রার মূল মন্ত্র। তাদের সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গঠন করা সম্ভব, যেখানে কোনো তরুণকে তার মেধা নিয়ে হতাশ হতে হবে না।
[email protected]
প্যানেল