ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাংলাদেশের সিনেমা হল সংকট ॥ ওটিটি কি ভবিষ্যৎ

তানজিদ শুভ্র

প্রকাশিত: ১৮:২১, ৩১ মে ২০২৫

বাংলাদেশের সিনেমা হল সংকট ॥ ওটিটি কি ভবিষ্যৎ

বাংলাদেশের বিনোদন জগতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। দর্শকদের বিনোদনের ধরন বদলেছে, ফলে নতুন মাধ্যমগুলো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। শিল্পীদের কাজের সুযোগ যেমন বেড়েছে, তেমনি বিনোদন বাজারও প্রসারিত হয়েছে, যা নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। প্রেক্ষাগৃহের পাশাপাশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে, যা দর্শকদের কাছে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। পাশাপাশি, ওয়েব সিরিজের জনপ্রিয়তাও বেড়েছে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্প দীর্ঘদিন ধরে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। একসময়ের জমজমাট সিনেমা হলগুলো এখন ক্রমেই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। দর্শকদের অভ্যাস বদলেছে, প্রযুক্তির উন্নয়নে বিনোদনের মাধ্যমেও এসেছে বৈচিত্র্য। এই পরিবর্তনের ফলে ওটিটি (ওভার-দ্য-টপ) প্ল্যাটফর্মগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রশ্ন জাগে, ওটিটি কি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সিনেমা হলের জায়গা দখল করতে চলেছে? নাকি দুই মাধ্যম সহাবস্থান করতে পারবে?
বাংলাদেশের সিনেমা হল সংকটের পেছনে কিছু কারণ বিদ্যমান। হলগুলোর পরিচালন ব্যয় দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু দর্শকের সংখ্যা কমছে। অনেক পুরানো হল ব্যবসায়িকভাবে টিকে থাকতে পারছে না। আবার অনেক দর্শক মনে করেন, দেশীয় চলচ্চিত্রের গল্প ও নির্মাণশৈলীতে বৈচিত্র্যের অভাব রয়েছে, যা তাদের হলে টানতে ব্যর্থ। আবার নতুন সিনেমাগুলো দ্রুত অনলাইনে ফাঁস হয়ে যাওয়ায় দর্শকরা সিনেমা হলে না গিয়ে ঘরে বসেই দেখে ফেলেন। পুরনো এক স্ক্রিনের সিনেমা হলগুলোর অবস্থা জরাজীর্ণ, দর্শকদের বসার ও প্রযুক্তিগত সুবিধার অভাবকেও দায়ী করছেন অনেকে। করোনা মহামারিতে ঘর বন্দি জীবন কাটানোর পর অনেক দর্শকের মধ্যেই সিনেমা হলে যাওয়ার অভ্যাস পরিবর্তিত হয়েছে। 
এদিকে সিনেমা হল সংকটের মধ্যেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে যে কেউ ওটিটি প্ল্যাটফর্মে চলচ্চিত্র উপভোগ করতে পারে। চরকি, হৈচৈ, বায়োস্কোপ, নেটফ্লিক্স-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো নিয়মিত নতুন সিনেমা ও সিরিজ প্রকাশ করছে। অনেক নতুন নির্মাতা সিনেমা মুক্তির জন্য ওটিটিকে প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন। আর দর্শক তার পছন্দ অনুযায়ী কনটেন্ট নির্বাচন করতে পারেন, যা সিনেমা হলের নির্দিষ্ট শিডিউলের চেয়ে বেশি সুবিধাজনক। ওটিটি জনপ্রিয় হলেও এটি সিনেমা হলের বিকল্প হতে পারবে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। হলের বড় পর্দায় সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা ওটিটিতে পাওয়া সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিকভাবে সিনেমা হল ও ওটিটি একসঙ্গে কাজ করছে। হলমুখী দর্শক ধরে রাখতে উন্নত কনটেন্ট ও মাল্টিপ্লেক্সের সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন। বাংলাদেশে কিছু নির্মাতা ও প্রযোজক শুধুমাত্র ওটিটির জন্য কনটেন্ট তৈরি করছেন, যা চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। তবে সিনেমা হল সংস্কৃতি একেবারে বিলীন হয়ে যাবে না। বরং প্রয়োজন নতুন কৌশল গ্রহণ করা। যেমন- আধুনিক মাল্টিপ্লেক্স স্থাপন, ভিন্নধর্মী কনটেন্ট তৈরি ও হল সংস্কার। দর্শকদের হলে ফেরাতে হলে নির্মাতাদের আরও বিনিয়োগ ও পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। সিনেমা হল এবং ওটিটি- দুই মাধ্যম একসঙ্গে টিকে থাকতে পারে, যদি চলচ্চিত্রশিল্পের সংশ্লিষ্ট সবাই আধুনিক বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

লেখক : শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

 

প্যানেল

×