
২৩ বছর আত্মগোপনে থাকা দেশের আন্ডারওয়ার্ল্ডের দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী (৬০) এবং মোল্লা মাসুদ ওরফে আবু রাসেলকে (৫৪) কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর এলাকার তিনতলা একটি বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে একই দিন রাজধানীর হাতিরঝিলে অভিযান চালিয়ে আরও দুইজন সহযোগী শূটার আরাফাত ও শরীফকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। এই দুই অভিযানে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড গুলি এবং একটি স্যাটেলাইট ফোন জব্দ করা হয়। পেশাদার খুনি, অস্ত্র ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজচক্রের নেতা অপরাধ জগতের এমন কোনো শাখা নেই, যেখানে তাদের পদচারণা হয়নি। তাদের নামেই এক সময় কাঁপত নগরবাসী। বাইন-মাসুদদের উত্থান শুধু অপরাধ জগতের চিত্রই বদলে দেয়নি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঘুমও হারাম করে দিয়েছিল সে সময়। ইন্টারপোলের রেড নোটিসপ্রাপ্ত এই দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী শেষ পর্যন্ত একসঙ্গে ধরা পড়েছে সেনাবাহিনীর জালে।
সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০টির বেশি খুনের মামলা রয়েছে। এছাড়া অবৈধ অস্ত্র এবং চাঁদাবাজিসহ প্রায় ১০০ মামলার আসামি তিনি। সুব্রত বাইন ঢাকার ‘সেভেন স্টার’ গ্রুপের মূলহোতা, তার প্রধান সহযোগী মোল্লা মাসুদ। আনারকলি মার্কেট, বিশাল সেন্টারসহ রাজধানীর বড় মার্কেটগুলোতে তারা চাঁদাবাজি করত। জমি দখল, এলাকাভিত্তিক আধিপত্য বিস্তারে লিপ্ত হতো খুনাখুনিতে। পুরান ঢাকার আদালত চত্বরে ২০০০ সালে মুরগি মিলনকে প্রকাশ্যে হত্যা করে সুব্রত বাইন আলোচনায় আসেন। এরপর ভারতের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন। ২০১৪ সালে নেপালের কাকরভিটায় ধরা পড়লেও জেল ভেঙে পালিয়ে কলকাতায় যান, সেখান থেকেই ঢাকায় চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করে। সে তালিকায় সুব্রত বাইন ১৩ নম্বরে এবং মোল্লা মাসুদ ৮ নম্বরে ছিলেন। তাদের ধরিয়ে দিতে সরকার মাথাপিছু ১ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তালিকায় থাকা অন্যান্য কুখ্যাত সন্ত্রাসী হলো- কালা জাহাঙ্গীর, পিচ্চি হান্নান, টোকাই সাগর, ফ্রিডম ইমাম, ফ্রিডম সোহেল, কিলার আব্বাস, ভিপি হান্নান, প্রকাশ কুমার, লিয়াকত, আরমান প্রমুখ। তাদের অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন, কেউ কেউ র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন, কেউ নিখোঁজ বা বিদেশে আত্মগোপনে।
আইএসপিআর জানিয়েছে, এই অভিযান একটি ‘উল্লেখযোগ্য সাফল্য। এটা সেনাবাহিনীর অপারেশনাল দক্ষতা, গোয়েন্দা ক্ষমতা এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি অঙ্গীকারের প্রতিফলন। সেনাবাহিনী সদর দপ্তরের সামরিক অপারেশনস অধিদপ্তর, ৫৫ পদাতিক ডিভিশন, ১৪ স্বতন্ত্র প্রকৌশলী ব্রিগেড, ৭১ মেকানাইজড ব্রিগেড, ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেড, অন্যান্য সামরিক ও গোয়েন্দা ইউনিট এই গ্রেপ্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সর্বোপরি এনএসআইয়ের সহায়তায় এই অভিযান সমন্বিতভাবে পরিচালিত হয়। সারাদেশে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চালানো হোক। দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা টেকসই রাখতে সেনা সদস্যদের চৌকস ভূমিকা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। আগামী দিনেও দেশবাসীর নিরাপত্তা বিধানে তাদের ভূমিকা থাকবে অগ্রগণ্য, এমনটিই আশা আমাদের।
প্যানেল