ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শহর হোক দুর্গন্ধমুক্ত, ঈদ হোক প্রশান্তিময়

তানিম মল্লিক, কনট্রিবিউটিং রিপোর্টার, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ১২:৪০, ২৮ মে ২০২৫

শহর হোক দুর্গন্ধমুক্ত, ঈদ হোক প্রশান্তিময়

প্রতীকী ছবি

গলির মুখে এক শিশুর মুখে হাত—নাকে রুমাল। পাশে একটি কালো প্লাস্টিকের ব্যাগে গরুর নাড়িভুঁড়ি, উড়ছে মাছি, কুকুর ঘুরছে তার চারপাশে। সে ঈদ করছে না, ঈদের মাঝেই সে যেন ঢুকে পড়েছে এক বিবর্ণ, দুর্গন্ধময় বাস্তবতায়।

প্রতিবছর কুরবানির ঈদে এমন দৃশ্য রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত শহরে নিত্যচেনা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই দৃশ্য কি ঈদের অনুষঙ্গ? পশু কুরবানি একটা ধর্মীয় দায়িত্ব, কিন্তু সেই দায়িত্ব পালন শেষে আমরা কি মুক্ত হচ্ছি নাগরিক দায়িত্ব থেকে?

বাংলাদেশে ঈদুল আজহা শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি অর্থনীতির বড় একটি চাকা ঘোরায়—বিশেষ করে কাঁচা চামড়া ও চামড়াশিল্পের সঙ্গে জড়িত লাখো মানুষের জীবিকা জড়িত এতে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে যখন দেখা যায় রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়া চামড়া রোদে পচছে, তখন বোঝা যায়, মূল্যবান সম্পদ কিভাবে অবহেলায় নষ্ট হয়ে যায়। কেউ ঠিকমতো লবণ দেয় না, কেউ চামড়ার দাম না পেয়ে রাগে ফেলে দেয় ড্রেনে। এ যেন কুরবানির চামড়া নয়, অর্থনীতির রক্তক্ষরণ।

এবারের ঈদ গ্রীষ্মের মাঝামাঝি। তীব্র গরমে রক্ত আর বর্জ্য মিশে শহর জুড়ে তৈরি হতে পারে অসহনীয় দূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি। গরুর খুরের নিচে পিচঢালা রাস্তায় যে রক্ত গড়িয়ে পড়ে, তা শেষমেশ মিশে যায় খালের পানিতে, নদীতে, আর আমাদের শরীরেই ফিরে আসে রোগজীবাণু হয়ে।

কিন্তু দায়টা শুধু সরকার বা সিটি করপোরেশনের নয়। মানুষ হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব আছে। যেখানে-সেখানে পশু জবাই করাটা ঈদের উৎসব নয়, এটি পরিবেশের প্রতি নিষ্ঠুরতা।

তাই এবার দরকার একটিই সিদ্ধান্ত—সচেতনতার। করণীয় কী?

১. নির্ধারিত স্থানে পশু কুরবানি দিন, যেখানে পানি ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা আছে।
২. বর্জ্য নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে আসুন, সঙ্গে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করুন।
৩. চামড়া নষ্ট না করে স্থানীয় প্রশাসন বা প্রতিষ্ঠানকে জানান, যাতে যথাযথভাবে সংগ্রহ করা যায়।
৪. কিশোর ও তরুণদের নিয়ে গঠন করুন ছোট ছোট স্বেচ্ছাসেবী টিম, যারা সচেতনতা ছড়াবে এলাকায়।
৫. ধর্মীয় নেতারাও খুতবায় পরিবেশবান্ধব কুরবানির আহ্বান জানাতে পারেন।

আমরা যদি ঈদের আনন্দকে রক্তাক্ত রাস্তা আর দুর্গন্ধের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলি, তাহলে উৎসবের পবিত্রতা হারিয়ে যায়। ঈদ মানে উৎসর্গ—কিন্তু সেই উৎসর্গ যদি শহরবাসীর স্বাস্থ্য ও স্বস্তিকে বিসর্জন দেয়, তবে আমাদের ভাবতে হবে—আমরা কোন ঈদ পালন করছি?

এইবারের কুরবানি হোক পরিচ্ছন্নতা আর মানবিক দায়িত্বের কুরবানি। কারণ ঈদের রাস্তা রক্তে নয়, ভালোবাসায় ভেজা হওয়াই তো কাঙ্ক্ষিত।

নোভা

×