
ছবিঃ সংগৃহীত
বর্তমানে ডায়াবেটিস একটা নিত্যদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওষুধ, ইনসুলিন, ডায়েট—সব মিলিয়ে রোগীদের জীবনযাপন হয়ে পড়েছে বেশ কঠিন। তবে এবার এই রোগের প্রাকৃতিক সমাধানে দেখা মিলল এক পুরনো আয়ুর্বেদিক উপাদানের—অর্জুন গাছের।
সম্প্রতি Indian Journal of Clinical Biochemistry-তে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অর্জুন গাছের বাকলের নির্যাস (extract) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দারুণ কার্যকর হতে পারে।
কীভাবে পরীক্ষা চালানো হয়েছিল?
গবেষক বি. রঘবন ও এস. কৃষ্ণকুমারী ইঁদুরের ওপর এই পরীক্ষা চালান। প্রথমে ইঁদুরদের শরীরে অ্যালক্সান নামের একটি রাসায়নিক দিয়ে কৃত্রিমভাবে ডায়াবেটিস সৃষ্টি করা হয়। এরপর ৩০ দিন ধরে তাদের দুটি গ্রুপে ভাগ করে ২৫০ মিগ্রা/কেজি ও ৫০০ মিগ্রা/কেজি হারে অর্জুন বাকলের ইথানল নির্যাস খাওয়ানো হয়।
ফলাফল ছিল চোখে পড়ার মতো। ডায়াবেটিক ইঁদুরদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা গড়ে ৩০০-এর ওপরে ছিল, যা ৩০ দিন পর কমে এসে দাঁড়ায় মাত্র ৮২-তে! শুধু তাই নয়, লিভার ও কিডনিতে গ্লুকোজ মেটাবলিজমের জন্য জরুরি কিছু এনজাইমের কার্যকারিতাও উন্নত হয়।
অর্জুন গাছ কেন এত উপকারী?
অর্জুন গাছ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় অনেক আগেই জনপ্রিয় হয়েছিল হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য। তবে এই গবেষণায় প্রথমবারের মতো দেখানো হয়েছে যে, এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক:
- উচ্চ মাত্রার নির্যাস (৫০০ মিগ্রা/কেজি) সবচেয়ে ভালো ফল দিয়েছে
- গ্লুকোজ তৈরি ও ভাঙার সঙ্গে যুক্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ এনজাইমের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এসেছে
- এটির প্রভাব প্রাকৃতিক এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন বলে আশা করা হচ্ছে
তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে…
এই গবেষণা হয়েছে ইঁদুরের ওপর। মানুষের ক্ষেত্রে একই রকম ফল মিলবে কি না, তা জানতে আরও গবেষণা দরকার। তাই এখনই নিজের চিকিৎসায় অর্জুন বাকল ব্যবহার শুরু না করাই ভালো—চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
শেষ কথায় আশার আলো
প্রাকৃতিক কোনো উপাদান যদি ডায়াবেটিসের মতো জটিল রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হয়, তবে সেটি নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী ঘটনা। অর্জুন গাছ হয়তো ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস চিকিৎসায় একটা বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
মারিয়া