শক্তিশালী ও সুস্থ হাড় গড়ার ক্ষেত্রে এখন শারীরিক ব্যায়ামের গুরুত্ব আগের চেয়ে অনেক বেশি। হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য সক্রিয় থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন, তবে ভিটামিন ডি’র মতো মৌলিক বিষয়গুলো অগ্রাহ্য করা ঠিক নয়।
ভিটামিন ডি পাওয়া যায় বিভিন্ন উপায়ে, যেমন সূর্যালোক গ্রহণ করা, অথবা ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার ও পানীয় খাওয়া। তবে অধিকাংশ মানুষের জন্য খাদ্য থেকে এই প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যথেষ্ট পাওয়া কঠিন হয়। আর যারা সূর্যের আলোতে বেশি সময় কাটান না, তাদের ভিটামিন ডি’র অভাব হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি কারও ভিটামিন ডি’র অভাব থাকে, তবে ভিটামিন ডি৩ সাপ্লিমেন্ট নেওয়া উপকারী হতে পারে। কিন্তু কতবার নেওয়া উচিত এবং কারা এ থেকে বিরত থাকবেন, তা জানা প্রয়োজন।
ভিটামিন ডি৩ কেন প্রয়োজন? এর কাজ কী?
ভিটামিন ডি একটি চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন যা শরীরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে সহায়তা করে, যার মধ্যে অন্যতম হাড় গঠন, জানাচ্ছেন প্যাট্রিসিয়া আরাউজো, নর্থওয়েস্টার্ন মেডিসিনের একজন অভিজ্ঞ ডায়েটিশিয়ান।
খাদ্যে ভিটামিন ডি প্রধানত দুই রূপে পাওয়া যায়—ভিটামিন ডি২ ও ভিটামিন ডি৩। ভিটামিন ডি৩ সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ভিটামিন ডি২ থেকে বেশি কার্যকর, কারণ এটি শরীরের অন্ত্র দ্বারা সহজে শোষিত হয়, জানাচ্ছেন লরা ডোমরোস, দ্য ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি ওয়েক্সনার মেডিক্যাল সেন্টারের নিবন্ধিত ডায়েটিশিয়ান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের জন্য বেশ কিছু কারণে গুরুত্বপূর্ণ:
হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা: ভিটামিন ডি হাড়ের সঠিক গঠন ও পুনর্গঠনে সহায়তা করে। এটি হাড় থেকে খনিজ পদার্থের ক্ষয় কমায়, যা রিকেটস, অস্টিওপরোসিস ও অস্টিওম্যালেশিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধে কার্যকর, বলেন সারা হারবেক, এম হেলথ ফেয়ারভিউর নিবন্ধিত ডায়েটিশিয়ান।
প্রয়োজনীয় খনিজের শোষণ বাড়ায়: ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের শোষণ বৃদ্ধি করে, যা শক্ত হাড় ও দাঁতের জন্য অপরিহার্য, জানান ডোমরোস।
ইমিউন সিস্টেম নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি৩ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং কিছু স্ব-অ্যাজীবি রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে, যেমন মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, Nutrients জার্নালে ২০২০ সালের এক পর্যালোচনায় উল্লেখ আছে।
শুধুমাত্র খাদ্য থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া সম্ভব?
ভিটামিন ডি কিছু খাবারে স্বাভাবিকভাবেই থাকে, যেমন চর্বিযুক্ত মাছ (সালমন, টুনা, সারডাইন), কড লিভার অয়েল, ডিমের কুসুম, গরুর লিভার ও চিজ, বলছেন হারবেক।
তবে শুধুমাত্র এই খাবার থেকে যথেষ্ট ভিটামিন ডি পাওয়া সম্ভব না। তাই Dietary Guidelines for Americans 2020-2025 অনুযায়ী, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমন গরুর দুধ, উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধ, জুস, দই ও সিরিয়ালে ভিটামিন ডি যুক্ত করা হয়।
আরাউজো বলেন, “ভিটামিন ডি’র স্বাস্থ্যকর মাত্রা বজায় রাখতে হলে প্রাকৃতিক খাবার ছাড়াও পর্যাপ্ত সূর্যালোক গ্রহণ এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি।”
কারা ভিটামিন ডি৩ সাপ্লিমেন্ট থেকে উপকৃত হতে পারেন?
যারা ভিটামিন ডি’র অভাবের ঝুঁকিতে আছেন, তারা ভিটামিন ডি৩ সাপ্লিমেন্ট থেকে উপকৃত হতে পারেন, জানাচ্ছেন ডোমরোস। এর মধ্যে রয়েছে যারা সূর্যের আলোতে কম সময় কাটান, ৬৫ বছরের বেশি বয়সী, গা কালো মানুষ অথবা যারা ক্রোন্স ডিজিজ, সিলিয়াক ডিজিজ, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, কিডনি বা লিভারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন।
গর্ভাবস্থা ও স্তন্যপানকালে ভিটামিন ডি গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ এটি শিশুর বৃদ্ধি এবং মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।
তবে সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তার রক্ত পরীক্ষা করে আপনার ভিটামিন ডি স্তর নির্ণয় করবেন, এরপরই সাপ্লিমেন্ট নেওয়া প্রয়োজন কি না বা নিরাপদ কিনা তা জানা যাবে।
কতবার ভিটামিন ডি৩ নেওয়া উচিত?
বয়স ও শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে এটি পরিবর্তিত হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক ৬০০ থেকে ৮০০ আইইউ ভিটামিন ডি৩ গ্রহণের পরামর্শ রয়েছে, জানান হারবেক। তবে সঠিক মাত্রা নির্ধারণে চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নিরাপদ সর্বোচ্চ গ্রহণ সীমা দৈনিক ৪,০০০ আইইউ। অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে ভিটামিন ডি’র বিষক্রিয়া হতে পারে, যা কিডনি ফেলিওর, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
শেষ কথা
যদি আপনি সূর্যালোক এবং খাদ্য থেকে যথেষ্ট ভিটামিন ডি না পান, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন ডি৩ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন। তবে এটি সবার জন্য নয়, এবং অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট ব্যবহারে বিপদ হতে পারে, তাই ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া কখনো ভিটামিন ডি৩ সাপ্লিমেন্ট নেওয়া উচিত নয়।
রাজু
