ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মায়া সভ্যতার পতনের পেছনে রহস্য কী? আদিম ডিএনএ বিশ্লেষণে মিলল চমকপ্রদ তথ্য

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ৩১ মে ২০২৫; আপডেট: ০৪:৫৫, ৩১ মে ২০২৫

মায়া সভ্যতার পতনের পেছনে রহস্য কী? আদিম ডিএনএ বিশ্লেষণে মিলল চমকপ্রদ তথ্য

ছবি: সংগৃহীত

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রাচীন মায়া সভ্যতার জনগোষ্ঠীর আকস্মিক অদৃশ্য হওয়ার গল্প প্যালোইনটোলজিস্টদের আবাক করেছে, কিন্তু তা অনেক সময়েই ধাঁধার মতো ছিল। তবে নতুন এক জেনেটিক গবেষণায় উঠে এসেছে সম্পূর্ণ নতুন তথ্য।

গবেষকরা আধুনিক হন্ডুরাসের কপান শহরে সমাধিস্থ মানবদেহের প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ করেছেন।

তাদের আবিষ্কার ঐতিহাসিক ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে। আগে ভাবা হতো, ১,২০০ বছর আগে কপান শহরের পতন মানেই ছিল সম্পূর্ণ জনসংখ্যার অবক্ষয়। বরং জেনেটিক তথ্য থেকে দেখা গেছে, অনেকেই এই স্থানেই থেকে গেছেন এবং বাইরের লোকদের সঙ্গে মিলেমিশে বংশ বিস্তার করেছেন।

পূর্বে গবেষকরা ভাবতেন, ক্লাসিক মায়া শহর-রাজ্যগুলোর রাজনৈতিক পতনের কারণ ছিল ব্যাপক জনসংখ্যার ধ্বংস বা ব্যাপক বহির্গমন। ইলিনয়ের ইউনিভার্সিটির মানববিদ লিসা লুসেরো লাইভসাইন্সকে বলেন, ‘আজকের ৭ মিলিয়নেরও বেশি মায়ারা প্রমাণ করে যে, রাজনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল, কিন্তু মানুষ নয়।”

মায়ান সাম্রাজ্যের পতন একটানা নয়, বরং শতাব্দীর ওপর ধরে চলা খরা, যুদ্ধ ও জনসংখ্যার অতিরিক্ত চাপের ফল। ইতিহাসবিদেরা সত্যিকার কারণ নিয়ে বিতর্কে থাকলেও বেশিরভাগই একমত যে, এসব কারণের সমন্বয়ে অনেক মায়া শহর-রাজ্য পরিত্যক্ত হয়েছে।

গবেষকরা কপানে পাওয়া সাতটি দেহের ডিএনএ বিশ্লেষণ করেন, যা সভ্যতার পতন বোঝার জন্য মূল ভূমিকা রাখে। নতুনভাবে সংগৃহীত জেনোমগুলোর তুলনা করা হয় আমেরিকার ৭০০-এর বেশি প্রাচীন ও আধুনিক জেনোমের সঙ্গে, যার ফলে একটি বিস্তৃত জেনেটিক মানচিত্র তৈরি হয়।

আবিষ্কার হয়, কপানে সমাধিস্থ ব্যক্তিরা ছিলেন মায়া জেনেটিক বংশের অংশ, যার সূত্রপাত ৩,৭০০ খ্রিষ্টপূর্বে, বর্তমানে বেলিজ অঞ্চলে। তবে গবেষকরা মধ্য মেক্সিকোর পাহাড়ি অঞ্চলের, যেখানে প্রাচীন জাপোটেক ও মিক্সে জনগণ বাস করত (প্রায় ৫০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৯০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত), তাদের জেনেটিক চিহ্নও খুঁজে পান।

এই মিশ্রণ প্রমাণ করে দীর্ঘদিন ধরে মায়া অভিজাতরা রাজনৈতিক জোট গঠনের জন্য বাইরের লোকদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। এছাড়াও এর দ্বারা বোঝা যায় যে, কিছু শাসক হয়তো দূরবর্তী অঞ্চল থেকে এসেছিলেন বা সেখানে বড় হয়েছিলেন।

ক্লাসিক মায়া সভ্যতার রাজনৈতিক পতনের পরও তাদের জেনেটিক উত্তরাধিকার বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে জীবিত ছিল। কপানের মানুষের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল আধুনিক মেক্সিকো, গুয়াতেমালা ও হন্ডুরাসের মানুষের সঙ্গে।

গবেষণার সহলেখক ও ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিনের জেনোমিক মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক শিগেকি নাকাগোমে বলেন, ‘এটি প্রমাণ করে যে মায়া সমাজ, বিশেষ করে অভিজাতদের মধ্যে, বৈচিত্র্যময় ও গতিশীলতা ছিল। তবে বাইরের প্রভাব সত্ত্বেও স্থানীয় বংশের ধারাবাহিকতা ছিল অসাধারণ।’

কপান শহরটি প্রতিষ্ঠিত হয় ৪২৬ খ্রিস্টাব্দে, ডায়নাস্টির প্রথম শাসক কিনিচ ইয়াক্স কুক মো দ্বারা, যিনি মধ্য মায়া অঞ্চলে থেকে এসেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। প্রধান বাণিজ্যিক পথের ধারে অবস্থিত এই শহর মেসোআমেরিকার বিভিন্ন সভ্যতার সাংস্কৃতিক মিলনস্থল হিসেবে কাজ করত।

যদিও কপান ব্যাপকভাবে প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে অধ্যয়ন করা হয়েছে, এর জেনেটিক ইতিহাস এতদিন অজানা ছিল। রহস্যজনকভাবে, সিকোয়েন্স করা ব্যক্তিদের মধ্যে এক পুরুষ, যিনি জটিল বস্তু নিয়ে সমাধিস্থ, সম্ভবত একজন অভিজাত শাসক ছিলেন। অন্যদিকে পাশেই সমাধিস্থ আরেক পুরুষ যিনি কোনো বস্তু ছাড়াই সমাধিস্থ, তাকে সম্ভাব্য বলিদানী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

গবেষকরা মনে করেন, নমুনার সীমাবদ্ধতা পুরো কপানের বা বৃহত্তর মায়া সভ্যতার জনসংখ্যার বৈচিত্র্যকে পুরোপুরি প্রতিফলিত করতে পারে না।

 

সূত্র: ডেইলি মেইল।

রাকিব

×