ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হারানো ক্যারিয়ারে ফের সাফল্যের ৮টি কার্যকর কৌশল

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ১ জুন ২০২৫

হারানো ক্যারিয়ারে ফের সাফল্যের ৮টি কার্যকর কৌশল

বর্তমান চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা যেমন কঠিন, তেমনি সঠিক সুযোগ খুঁজে পাওয়া ও প্রবেশ করাও প্রায় অবিশ্বাস্য হয়ে উঠেছে। অনেক সময়ই আমরা অনলাইনে দেখা চাকরিগুলোতে আবেদন করি, যা হয় অতিরিক্ত চাহিদাসম্পন্ন, হয় কাল্পনিক বা পুরনো হওয়ায় আমাদের সময় ও শ্রম নষ্ট হয়। বিশেষ করে বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগের বাজার গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।

এই কঠিন সময়ে চাকরি পাওয়া মানে যেন কোনো পরিত্যক্ত শহরে পথ খুঁজে পাওয়া। অনেকেই ‘যে কোনো চাকরিতে আবেদন কর’ মুডে থাকেন, যা হয়তো শেষ পর্যন্ত ফলপ্রসূ হলেও, দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর যাত্রা হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় আপনি যে চাকরিটুকু পেয়ে থাকবেন, সেখানে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
বিশ্ববাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে স্পষ্ট যে, চাকরির বাজার বড় ধরনের আঘাত পেয়েছে। যুক্তরাজ্যের বেকারত্বের হার এখন ৪.৮ শতাংশে পৌঁছেছে এবং সাম্প্রতিক তিন মাসে মাত্র সংক্ষেপে ত্রিশ লাখের বেশি redundancies (ছাঁটাই) হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কর্মজীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথে চাপ ও হতাশা স্বাভাবিক। তাহলে কীভাবে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে ক্যারিয়ার পুনরায় সফলভাবে গড়তে পারা যাবে? চলুন, সে বিষয়ে আটটি কার্যকর ধাপ বিশ্লেষণ করি।

প্রথমেই থামুন এবং একবার গভীর নিঃশ্বাস নিন। নিজের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করুন। আপনার সিভি, লিংকডইন বা অন্যান্য পেশাগত সামাজিক প্রোফাইল আপডেট আছে কিনা দেখুন। আপনি কী অর্জন করেছেন? কীভাবে এই অবস্থানে পৌঁছেছেন? আপনার পরিকল্পনা কী?

অনেক সময় এটি নিরীহভাবে শুরু হয়। আমরা বিশ্বাস করি আবেদন প্রক্রিয়ায় সঠিক ব্যক্তি নির্বাচিত হবেন এবং তা সাধারণত আমরা নিজেই হই। কিন্তু ‘আবেদন’ বোতামের পিছনের অন্যপাশটা দেখে নিতে হবে। যখন সংস্থাগুলোতে নিয়োগদাতারা ছাঁটাই হচ্ছেন, রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিগুলো সংকুচিত হচ্ছে এবং কাজের চাপ বেড়েই চলেছে, তখন প্রত্যেক আবেদনকারীর সঙ্গে সমান আচরণ হয় না। যদি আপনার আবেদন জমা দেয়ার সময় সেটা অফিস আওয়ারে হয়, তাহলে আবেদনটি পড়ে দেখার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুশৃঙ্খলতা। কয়েক সপ্তাহ ধরে অপ্রয়োজনীয়ভাবে শুধু ‘আবেদন করুন’ বাটনে ক্লিক করা শুরু করলে, আপনি যে চাকরির জন্য আবেদন করেছেন তা ভুলে যেতে পারেন। কল পেলে নিজের আবেদন সম্পর্কে জানাতে পারতে না পারলে শোনা যায় যে তারা আপনার অসুস্থতা বুঝতে পেরেছে। যদিও অনেকের জন্য অর্থ উপার্জন জরুরি, তবু অগোছালো আবেদন পদ্ধতি আপনাকে ব্যর্থ করতে পারে। তাই একটি নোটবুক রাখুন, যেখানে প্রতিটি চাকরির আবেদন, তার উৎস এবং তারিখ লিপিবদ্ধ থাকবে। এতে আপনি নিজের অগ্রগতি বুঝতে পারবেন এবং সুযোগ পেলে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে এগোতে পারবেন।

সহায়তা চাওয়া মোটেই দুর্বলতার পরিচায়ক নয়। বিশেষ করে যারা অনলাইনে চাকরির বাজারে নতুন, তারা একটু ভিন্নভাবে এই পরিস্থিতি অনুভব করবেন। চাকরি হারানো মানে জীবনযাত্রার পরিবর্তন, যা এক ধরনের মানসিক শোক। আপনার পরিচিতজন, পেশাজীবী নেটওয়ার্ক, মানবসম্পদ বিভাগ বা ক্যারিয়ার কোচদের কাছে সরাসরি যোগাযোগ করুন। ফোনে কথা বলার মাধ্যমে তাদের পরামর্শ নিন, এতে মনোবল বাড়বে এবং আপনি নতুন উদ্যমে চাকরির জন্য প্রস্তুত হবেন।

তৃতীয়ত, কৌশল পরিবর্তনের সময় এসেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে নিজের মনোবল ও শক্তি বাড়ান। যদি আপনি সচেতন হন যে পরিস্থিতি কঠিন এবং আপনি পরিকল্পনা করছেন, তবে অর্ধেক পথ ইতোমধ্যেই অতিক্রম করেছেন। হয়তো আপনার কিছু সঞ্চয় আছে অথবা আয়ের জন্য পার্টটাইম কাজ করছেন। নিয়মিত ছোট একটি নেটওয়ার্কের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন যারা আপনাকে মানসিক সমর্থন দেবে এবং বর্তমান পরিস্থিতির চাপ কমাতে সাহায্য করবে। খবরের কোলাহল থেকে দূরে থাকুন, নিজের মনোযোগ হারাবেন না।

যা করছেন, তা মেনে নিয়ে নিজের প্রতি মনোযোগ দিন। সারা দিনের ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সেগুলো পূরণ করলে নিজেকে পুরস্কৃত করুন। সুযোগ বুঝে পরিকল্পনা করে সঠিক সময়ে নিজের সর্বোচ্চ প্রভাব ফেলুন। কঠিন সময় হলেও আপনি অচল পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে নতুন সূচনা করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।

সর্বোপরি, চাকরির বাজারের বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংযম, সুশৃঙ্খলতা ও সঠিক পরিকল্পনা অপরিহার্য। নিজেকে খুঁজে বের করুন, নিজের সামর্থ্য কাজে লাগান এবং নতুন পথ খুঁজে চলুন। ক্যারিয়ার ফিরিয়ে আনার এই আট ধাপ আপনার সফলতা নিশ্চিত করতে পারে।
সুতরাং, সংক্ষেপে স্মরণীয় কিছু মূল বিষয় হলো:
 ১. একজন দক্ষ রিক্রুটারের সহযোগিতা নিন এবং তাদের পরামর্শ মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
 ২. নিজের বর্তমান অবস্থান পর্যালোচনা করুন এবং পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।
 ৩. একটি নোটবুক রাখুন যেখানে আপনার ক্যারিয়ার লক্ষ্য ও অগ্রগতি লিপিবদ্ধ থাকবে।
 ৪. সিভি ও সামাজিক প্রোফাইল হালনাগাদ করুন যাতে তারা আপনার প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করে।
 ৫. চাকরির বাজার এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশকারীদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠুন।
 ৬. সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী ও নেটওয়ার্কিং গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন এবং সাহায্য চাওয়া থেকে সংকোচ করবেন না।
 ৭. সাক্ষাৎকারের জন্য সঠিক প্রস্তুতি নিন এবং পরিকল্পনা করুন।
 ৮. সর্বদা ইতিবাচক থাকুন এবং নিজের ওপর বিশ্বাস বজায় রাখুন।
চাকরি হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়বেন না। সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া এবং সচেতন প্রচেষ্টাই হবে আপনার ক্যারিয়ারের নতুন সূচনা। কঠোর পরিশ্রম ও সঠিক কৌশল নিয়েই আসে সাফল্যের দরজা।

 


সূত্র:https://tinyurl.com/2wmadz6x

আফরোজা

×