নীরব ঘাতক ‘ফ্যাটি লিভার’: শুরুটা নিরীহ, শেষটা ভয়াবহ!

লিভারে চর্বি জমা বা "ফ্যাটি লিভার" (Fatty Liver) একটি নীরব ঘাতক রোগ। প্রাথমিক পর্যায়ে এর তেমন কোনো লক্ষণ না থাকলেও, সময়মতো প্রতিরোধ না করলে এটি মারাত্মক জটিলতায় পরিণত হতে পারে—যেমন লিভার সিরোসিস, হেপাটাইটিস, এমনকি লিভার ক্যান্সার।

কী এই ফ্যাটি লিভার?

চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলা হয় "হেপাটিক স্টিয়াটোসিস" (Hepatic Steatosis)। এটি তখনই ঘটে, যখন লিভারে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চর্বি জমা হয়। সাধারণত ৫–১০% এর বেশি ফ্যাট জমলেই তা সমস্যাজনক ধরা হয়।

লক্ষণ যেগুলো অবহেলা করবেন না:

• উপরের পেটের ডান পাশে চাপ লাগা বা ভারী অনুভব

• হজমে সমস্যা, গ্যাস বা অরুচি

• অবসাদ বা দুর্বলতা

• ওজন বেড়ে যাওয়া (বিশেষত পেটের চারপাশে)

তবে অনেক সময় কোনো লক্ষণই প্রকাশ পায় না, যা রোগটিকে আরও ভয়ানক করে তোলে।

প্রধান কারণসমূহ:

• অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, ভাজাভুজি ও চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ

• অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা

• অনিয়মিত জীবনযাপন ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব

• অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন (Alcoholic fatty liver)

• ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ

সময়মতো না প্রতিরোধ করলে কী হয়?

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ফ্যাটি লিভার সময়মতো চিকিৎসা ও লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে এটি:

• নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটো-হেপাটাইটিস (NASH)-এ রূপ নিতে পারে, যার ফলে লিভারে প্রদাহ ও ক্ষতি হয়

• লিভার সিরোসিস: দীর্ঘমেয়াদে লিভারের কোষ নষ্ট হয়ে এটি স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে

• লিভার ক্যান্সার: চূড়ান্ত ধাপে এটি জীবনঘাতী ক্যান্সারও সৃষ্টি করতে পারে

কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?

1. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

2. ফাস্ট ফুড, তেল-মসলা কম খান

3. প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন

4. চিনি ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন

5. অ্যালকোহল পুরোপুরি পরিহার করুন

চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি

ফ্যাটি লিভার ধরা পড়লে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সময়মতো চিকিৎসা ও নিয়মিত পরীক্ষা করালে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিয়মিত লিভার ফাংশন টেস্ট (LFT), আল্ট্রাসনোগ্রাফি এবং প্রয়োজনে ফাইব্রোস্ক্যান করে লিভারের অবস্থা বোঝা জরুরি।