ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

“খাবারের জন্য মরতে হবে ভাবিনি”—রাফাহে বেঁচে ফেরা আহতদের করুণ গল্প

প্রকাশিত: ১৩:১৩, ৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৩:১৭, ৪ জুন ২০২৫

“খাবারের জন্য মরতে হবে ভাবিনি”—রাফাহে বেঁচে ফেরা আহতদের করুণ গল্প

ছবিঃ সংগৃহীত

নাসের হাসপাতালের অস্থায়ী তাম্বুতে একটি খাটে শুয়ে আছে ১৩ বছরের ইয়াজান মুসলেহ। তার পাতলা শরীরের ওপর বড় একটি সাদা ব্যান্ডেজ, যা তার ছিন্নবিচ্ছিন্ন পেটকে একত্রে ধরে রেখেছে। রবিবার রাফাহে খাদ্য সহায়তা সংগ্রহের সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে তার অন্ত্র ফেটে যায়।

ইয়াজান, তার ভাই ইয়াজিদ (১৫) এবং বাবা ইহাব মুসলেহ (৪০) সকাল ভোরে খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকার আশ্রয় থেকে রাফাহর আল-আলম গোলচত্বরের দিকে রওনা হন। গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)-এর মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছিল সেখানে।

ইহাব তার ছেলেদের একটি উঁচু জায়গায় অপেক্ষা করতে বলেন। হঠাৎ চারপাশ থেকে ভারী গুলিবর্ষণ শুরু হয়। “আমি তখন ছেলেদের দিকে তাকালাম আর দেখলাম ইয়াজান গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যাচ্ছে,” বলেন ইহাব।

ইয়াজানকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একটি গাধার গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার অন্ত্র ও প্লীহা ছিন্নভিন্ন হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, তাকে দীর্ঘ ও জটিল চিকিৎসা নিতে হবে।

তার পাশে বসে থাকা মা ইমান বলেন, “আমরা শুধু খাবার নিতে গিয়েছিলাম, আমাদের বাচ্চারা ক্ষুধায় কষ্ট পাচ্ছে। কে এমন মানুষের ওপর গুলি চালায়?”

ইহাব বলেন, “এগুলো অপমানজনক প্রক্রিয়া, কিন্তু আমরা বাধ্য। সন্তানদের ক্ষুধার মুখে রেখে কীভাবে চুপ করে থাকি?” তিনি আরও জানান, এর আগেও একবার খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়েছিলেন কিন্তু ভয়াবহ হুড়োহুড়ির কারণে ফিরে আসতে বাধ্য হন। এবার ছেলেকে হারাতে বসে খালি হাতে ফিরে এসেছেন।

“আমি প্রতিবারই ভাবি, হয়তো ফিরে আসব, হয়তো আর ফিরব না। কিন্তু চেষ্টা থামাতে পারি না,” বলেন তিনি।

একই তাম্বুতে শুয়ে আছেন মোহাম্মদ আল-হোমস (৪০), পাঁচ সন্তানের বাবা। তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন পা ও মুখে। মুখের সামনের দাঁত ভেঙে গেছে। “চারপাশে শুধু গুলির শব্দ, ধোঁয়া, চিৎকার আর রক্ত। মনে হচ্ছিল, পৃথিবীর শেষ দিন,” বলেন মোহাম্মদ।

৩৬ বছর বয়সী খালেদ আল-লাহহাম, যিনি ১০ জন পরিবার সদস্যকে দেখাশোনা করেন, তার পায়ে গুলি লাগে। তিনি বলেন, “আমি কখনো কল্পনাও করিনি যে খাবারের জন্য আমাকে মৃত্যুর মুখে পড়তে হবে।” তিনি অভিযোগ করেন, GHF ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষকে অপমান করছে।

“যদি খাবার না দিতেই চায়, তাহলে ডেকে এনে কেন হত্যা করে?” প্রশ্ন করেন তিনি।

GHF, যা ২০২৫ সালের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঠিকাদারদের মাধ্যমে গাজায় মানবিক সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছিল, বিতর্কের মুখে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান জ্যাক উড বিতরণ শুরুর আগেই পদত্যাগ করেন এবং বস্টন কনসালটিং গ্রুপও তাদের সহযোগিতা প্রত্যাহার করে।

একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা GHF-এর বিতরণ প্রক্রিয়াকে ‘অমানবিক ও পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে নিন্দা জানিয়েছে। গাজাবাসীরা বলছে, “আমরা শুধু খাবার চেয়েছিলাম, আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হলো গুলি ও রক্তপাত দিয়ে।”

সুত্রঃ আল জাজিরা 

নোভা

×