
বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগশিল্পী এবং বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের সিইও ওয়ারেন বাফেটের তরুণ প্রজন্মের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান উপদেশটি সম্পদের বৃদ্ধির ওপর নয়। বরং এটি কেন্দ্রীয় দিক হলো আপনি কার সঙ্গে সময় কাটান এবং তাদের সঙ্গে কী করেন।
গত শনিবার বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের বার্ষিক শেয়ারহোল্ডার সম্মেলনে যখন তরুণ বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শের কথা জানতে চাওয়া হয়, বাফেট জোর দিয়ে বলেন, সফল হতে চাইলে স্মার্ট ও প্রজ্ঞাবান মানুষের সান্নিধ্যে থাকা অত্যন্ত জরুরি। তিনি আরও বলেন, শুধু নিজে নয়, আপনার চারপাশের মানুষেরও ভালো লাগার মতো এমন কোনো কাজ বা পথ বেছে নেওয়া প্রয়োজন, যেটা আপনি টাকার জন্য নয়, আসল পছন্দ হিসেবে চালিয়ে যেতে চান।
৯৪ বছর বয়সী এই বিনিয়োগজগৎ বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব জানান, "আপনার জীবন সাধারণত সেই দিকেই এগিয়ে যাবে যাদের সঙ্গে আপনি কাজ করছেন।" আর যারা শুধুমাত্র অর্থের জন্য নয়, যারা প্রকৃতিই ভালো কাজ করতে চান তাদের সঙ্গ পেলে আপনি সবসময় শিখবেন। আপনি শুধু ব্যবসায় নয়, জীবনের সফলতারও পাঠ গ্রহণ করবেন।
বাফেট তার সাফল্যের অনেকটাই তার কাজ করা সঠিক মানুষের ওপর দেন। বিশেষ করে বার্কশায়ারের প্রাক্তন বোর্ড সদস্য ওয়ালটার স্কট জুনিয়র এবং ডেভিড "স্যান্ডি" গটসম্যানকে তিনি উচ্চ মূল্যায়ন করেন। এমনকি যদি কোম্পানিটি আজকের আকারের ছোট একটি অংশ হতো, তবুও তারা নেতৃত্ব দেবেন বলেও তিনি মনে করেন।
নিজের পরামর্শ মেনে চলায় বাফেটের সাফল্যই প্রমাণ করে তার কথার সত্যতা। ১৯৬৫ সালে যখন বাফেট বার্কশায়ার হ্যাথাওয়েকে পরিচালনা গ্রহণ করেন, তখন সেটি একটি পতিত বস্ত্র কোম্পানি ছিল। ২০২৪ সালের শেষে পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ারের মূল্য বেড়েছে আশ্চর্যজনক ৫,৫০২,২৮৪ শতাংশ, যা একই সময়ে S&P ৫০০ সূচকের ৩৯,০৫৪ শতাংশ বৃদ্ধির তুলনায় অনেক বেশি।
পছন্দের পথ বেছে নেওয়ার ব্যাপারে বাফেট বলেন, "যদি আপনি শুধু তাকান যারা প্রচুর টাকা উপার্জন করছেন এবং তাদের কপি করার চেষ্টা করেন, তবে আপনার জীবন মানে হয় না। আপনার জীবনে যা সত্যিই খুঁজছেন, তা হলো এমন কাজ যা আপনি টাকা না পেলেও করতে ইচ্ছুক থাকবেন। আমার ক্ষেত্রে সেটি বহু বছর ধরে হয়েছে।"
সুখী জীবন মানে দীর্ঘজীবন
শুধু সফল ক্যারিয়ার নয়, বাফেট মজা করে বলেন, এমন কিছু করা যা আপনি ভালোবাসেন, সেটি আপনাকে দীর্ঘজীবী করতে সাহায্য করতে পারে।
"আমি মনে করি, একজন সুখী মানুষ তার চাইতে বেশি বাঁচে যিনি তার জীবনে এমন কাজ করেন না যেগুলো সে সত্যিই পছন্দ করে না," তিনি মন্তব্য করেন।
বাফেট অবশ্যই নিজের চারপাশে দীর্ঘজীবী বন্ধু ও সহকর্মীদের রেখেছেন। ওয়ালটার স্কট ৯০ বছর বয়সে, গটসম্যান ৯৬ বছর বয়সে এবং বার্কশায়ারের প্রাক্তন উপ-চেয়ারম্যান চার্লি মুঙ্গার, যিনি দীর্ঘদিন বাফেটের হাতের ডান ছিলেন, ২০২৩ সালে ৯৯ বছর বয়সে প্রয়াত হন।
বিজ্ঞানও বাফেটের কথার পক্ষে দাঁড়ায়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় ৮০ বছরের বেশি সময়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে দীর্ঘমেয়াদী সুখের মূল চাবিকাঠি হলো সম্পদ, ক্যারিয়ার সফলতা কিংবা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়, বরং শক্তিশালী ও ইতিবাচক সম্পর্ক।
গবেষক মার্ক শুলজ ও রবার্ট ওয়ালডিঙ্গার ২০২৩ সালে লিখেছেন, "ঘনিষ্ঠ সামাজিক সম্পর্ক আমাদের আরও সুখী, সুস্থ এবং দীর্ঘজীবী করে তোলে।"
সুতরাং তরুণ প্রজন্মের জন্য ওয়ারেন বাফেটের শিক্ষা স্পষ্ট: জীবনে সঠিক মানুষের সঙ্গে থাকা এবং আপনার ভালো লাগার কাজ বেছে নেওয়া একমাত্র উপায় সফল ও সুখী জীবনযাপনের। আর টাকা এখানে শুধুমাত্র একটি পরিণতি, প্রধান বিষয় সঠিক মানসিকতা ও সুসম্পর্ক।
এই বাণী থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা নিজেদের জীবনের পছন্দ ও সঙ্গীদের বাছাই করতে পারি, যা জীবনের প্রতি দিনকে আরও অর্থবহ করে তুলবে।
সূত্র:https://tinyurl.com/3a2z3rd2
আফরোজা