ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সন্তান রেজাল্ট খারাপ করছে? অলসতা না মানসিক রোগ?

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ৫ জুন ২০২৫

সন্তান রেজাল্ট খারাপ করছে? অলসতা না মানসিক রোগ?

ছবি: সংগৃহীত।

স্কুল থেকে ফেরার পর সন্তান পড়ার টেবিলে বসতে চায় না। বই খোলার আগেই মোবাইল, গেম বা টিভির প্রতি আকর্ষণ। পরীক্ষার রেজাল্ট হতাশাজনক, অথচ দিনরাত অভিযোগ—“পড়তে ভালো লাগে না”, “মাথায় ঢোকে না”। এমন পরিস্থিতিতে অনেক বাবা-মা ভাবেন, হয়তো সন্তান অলস হয়ে পড়েছে বা ইচ্ছেশক্তির অভাব। কিন্তু এর পেছনে থাকতে পারে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গুরুতর সমস্যা। প্রশ্ন হচ্ছে—সন্তানের এই অমনোযোগিতা কি কেবলই অভ্যাসগত? নাকি এটি কোনো অদৃশ্য মানসিক রোগের ইঙ্গিত?

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার সমাজে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা চরমে। বাবা-মা চান সন্তান যেন ‘ফার্স্ট বয়’ বা ‘ফার্স্ট গার্ল’ হয়। কিন্তু সবাই তো একরকম নয়। কেউ পড়াশোনায় মনোযোগী, কেউবা খেলাধুলায় আগ্রহী। কিন্তু যখন কোনো মেধাবী বা স্বাভাবিক মানের শিশু ক্রমাগত রেজাল্ট খারাপ করে, পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, তখন তা শুধু ‘অলসতা’ বলে উড়িয়ে দেওয়া ঠিক নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদা হক বলেন, “অনেক সময় শিশুর মধ্যে অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিজঅর্ডার (ADHD), ডিপ্রেশন বা অ্যানজাইটি ডিসঅর্ডার থাকতে পারে, যেগুলোর কারণে পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।”

তিনি আরও জানান, “শুধু বকাবকি বা শাস্তি দিয়ে সমস্যার সমাধান হয় না। বরং তা শিশুর আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। বাবা-মাকে বুঝতে হবে—পেছনের কারণটা কী।”

কোন লক্ষণগুলো লক্ষ্য করবেন:

  • পড়তে বসলে মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা

  • সবকিছু দ্রুত ভুলে যাওয়া

  • একা একা থাকতে চাওয়া বা হঠাৎ মেজাজ খারাপ

  • পরীক্ষার আগে অতিরিক্ত টেনশন বা কান্নাকাটি

  • আগের চেয়ে বেশি ঘুমানো বা ঘুমে বিঘ্ন

সমাধান কী হতে পারে?
১. প্রথমেই শিশু মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
২. পড়াশোনাকে চাপ নয়, আনন্দদায়কভাবে উপস্থাপন করুন।
৩. শিশুর পছন্দ-অপছন্দ বুঝে সময়সূচি তৈরি করুন।
৪. প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত করুন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করুন।
৫. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—শিশুকে শুনুন এবং বুঝুন।

সব শিশু এক রকম নয়। কারও জন্য পড়াশোনা সহজ, কারও জন্য কঠিন। কেউ হয়তো অলস নয়, বরং মানসিক চাপে ভুগছে। তাই সন্তান পড়াশোনায় অমনোযোগী হলেই চিৎকার-চেঁচামেচি নয়, বরং দরকার সহানুভূতি ও বিজ্ঞানসম্মত সহায়তা। সময়মতো মনোবিদের কাছে গেলে সমস্যার সমাধানও সম্ভব।

নুসরাত

×