
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের মেঝেতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে
বাবা ও ভাই সুস্থ হওয়ার পর গত দুই দিন আগে ডায়রিয়া আক্রান্ত মাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন পলশা গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইয়াসির আরাফাত। রবিবার পর্যন্ত মায়ের সেবাযতœ করলেও রাত থেকে নিজেই ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরাফাত। মা ও ছেলে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের একটি কক্ষে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের পলশা গ্রামের বাসিন্দা তারা। জানা যায়, গত এক সপ্তাহ ধরে এই গ্রামে হঠাৎ করেই বেড়েছে ডায়রিয়া রোগের সংক্রমণ। গ্রামের সিংহভাগ বাড়িতেই নারী-পুরুষ ও শিশুরা আক্রান্ত হয়েছেন ডায়রিয়ায়। এমনকি এক বাড়িতে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন একাধিক রোগী।
স্থানীয়রা জানান, পলশা গ্রামে ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়া। সেখান থেকে জেলা হাসপাতালে দৈনিক ভর্তি হচ্ছে নতুন রোগী। তাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রেফার্ড করা হয়েছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গত এক সপ্তাহে পলশা গ্রামেই অন্তত দেড় শতাধিক রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে জানান- রোগী ও স্বজনরা।
ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ইয়াসির আরাফাত বলেন, কয়েকদিন আগে বাবাকে হাসপাতাল থেকে সুস্থ করে বাসায় নিয়ে গেছি। ছোট ভাইও অসুস্থ ছিল ডায়রিয়ায়। সেও এখন সুস্থ হয়ে বাসায় আছে। মাকে নিয়ে হাসপাতালে এসে আমিও গতকাল রাত থেকে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। শুধু আমাদের নয়, পুরো গ্রামের এমন অবস্থা। বেশিরভাগ বাড়িতেই একাধিক ডায়রিয়া রোগী।
পলশা গ্রামের ডায়রিয়া রোগী বিকাশ চৌধুরী জানায়, গত ৪ দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। কোনো উন্নতি নাই। অত্যধিক রোগী হওয়ায় চিকিৎসা ভালো মতো হচ্ছে না। ঠিকমতো ডাক্তার রোগী দেখেন না। হাসপাতালে ভর্তি থাকা বেশিরভাগ রোগীই পলশা গ্রামের। প্রত্যেক দিন সেখান থেকে নতুন করে আরও রোগী আসছে। একই গ্রামের মোত্তাকিন বলেন, গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালে পলশা গ্রামের রোগী অনেক। আমাদের আশপাশের প্রায় সব বাড়িতেই ডায়রিয়া রোগী। স্বাভাবিকভাবে চলতে চলতে হঠাৎ করেই পাতলা পায়খানা শুরু হয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষজন। আমাদের গ্রামের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে গেছেন হোটেল মালিক মোত্তালেব হোসেন জানান, বাড়িতে আমি ছাড়াও বাবা, স্ত্রী ও ভাগনে অসুস্থ হয়েছিল ডায়রিয়ায়। পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়া। পানি পান করতেই ভয় লাগছে। কাকে কখন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত করছে, বোঝা যাচ্ছে না। গ্রামের প্রত্যেকটি মানুষ চরম আতঙ্ক নিয়ে দিন পার করছে। সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগের নিকট আবেদন দ্রুত একটি কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
একই এলাকা থেকে এতগুলো রোগী আসা উদ্বেগজনক বলছেন চিকিৎসকরা। পানির ব্যাকটেরিয়া থেকেই এমনটা হতে পারে বলে ধারণা তাদের। পরামর্শ দিচ্ছেন বিশুদ্ধ খাবার পানি পানের।
জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাসুদ পারভেজ বলেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধপত্র রয়েছে। যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে আগত রোগীদের সেবা দেওয়ার। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পানিতে ব্যাকটেরিয়া থেকে এমনটা হতে পারে। রোগী ও স্বজনদের বিশুদ্ধ পানি পান করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বাইরের বাসি-পচা খাবার ত্যাগ করার জন্য বলা হচ্ছে। আশা করি, শিগগিরই সচেতন হলে রোগী বৃদ্ধির হার কমবে।