ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভূমি অফিস ডিজিটাইজেশনের ফলে যে ৬ ধরনের জমি বিক্রি কার্যত বন্ধ

প্রকাশিত: ২২:০৫, ১ জুন ২০২৫

ভূমি অফিস ডিজিটাইজেশনের ফলে যে ৬ ধরনের জমি বিক্রি কার্যত বন্ধ

ছবিঃ সংগৃহীত

ভূমি অফিসের সকল কার্যক্রম ধাপে ধাপে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরের ফলে দেশের ভূমি খাতে এক বিপ্লব ঘটছে। এতে যেমন ভূমি সংক্রান্ত প্রতারণা ও জালিয়াতির সুযোগ কমছে, তেমনি কিছু ধরনের জমি আর আগের মতো সহজে বিক্রি করা যাচ্ছে না। নতুন আইনের বিধিমালা অনুযায়ী এখন ছয় ধরনের জমি বিক্রয় কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে বা জটিল হয়ে পড়েছে।

এক সময় কাগজে-কলমে দলিল পরিবর্তন, ঘষামাজা করে নাম পাল্টানো, কিংবা ব্লেড দিয়ে মুছে নতুন নাম বসানোর মত প্রতারণা অহরহ ঘটত—এমন চিত্র দলিল লেখকের চেম্বারেও দেখা যেত। কিন্তু বর্তমান সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল পদক্ষেপের কারণে এসব অনিয়ম এখন আর সম্ভব নয়।

নিচে তুলে ধরা হলো সেই ছয় ধরনের জমি যেগুলো বর্তমানে বিক্রি করা কঠিন বা অসম্ভব হয়ে পড়েছে:

১. এজমালি জমি (যৌথ মালিকানাধীন জমি):
যৌথভাবে রেকর্ডভুক্ত জমি এখন থেকে সহজে বিক্রি করা যাচ্ছে না। একাধিক ওয়ারিশ বা মালিকের সম্মতি ও সুনির্দিষ্ট দাগ অনুযায়ী অংশ নির্ধারণ ছাড়া এখন জমি বিক্রয় সম্ভব নয়। বন্টননামা না থাকলে এমন জমি বিপদজনক হয়ে ওঠে, কারণ একজন বিক্রি করতে চাইলে অন্য মালিক আপত্তি তুলতে পারেন।

২. জাল রেকর্ডভিত্তিক দলিল:
অর্থাৎ পূর্বে অন্যের নামে থাকা জমি নিজের নামে দেখিয়ে দলিল তৈরি করা হতো। ডিজিটাল ভূমি রেকর্ডে এসব অসঙ্গতি ধরা পড়ছে এবং সংশোধনের সুযোগ না থাকায় এ ধরনের দলিল এখন বাতিল বলে গণ্য হচ্ছে।

৩. জাল নামজারি:
ভুয়া নামজারি করে জমি বিক্রয় এক সময় সহজ ছিল। বর্তমানে অনলাইন নামজারির ফলে জাতীয় পরিচয়পত্র, হোল্ডিং নম্বর, জমির দাগ অনুযায়ী নাম যাচাই করা হচ্ছে। ফলে এখন এসব জাল নামজারি করে জমি বিক্রি আর সম্ভব নয়।

৪. ভুয়া দাখিলা:
জমির খাজনা প্রদানের প্রমাণ হিসেবে ভুয়া দাখিলা তৈরি করে জমি বিক্রি করা হতো। এখন খাজনা অনলাইনে প্রদান করতে হয় এবং সিস্টেম অটোমেটেড হওয়ায় জাল দাখিলা আর গ্রাহ্য নয়।

৫. জাল দলিল:
আগে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ বা চক্রান্তের মাধ্যমে জাল দলিল তৈরি করে জমি বিক্রি করা যেত। কিন্তু এখন দলিলের স্ক্যান কপি ভূমি অফিস, এসি (ল্যান্ড) এবং ক্রেতা—তিনটি পক্ষের কাছে সংরক্ষিত থাকায় প্রতারণার সুযোগ নেই।

৬. জাল খাজনার দাখিলা:
একাধিক মালিকের একাধিক দাগবিশিষ্ট জমির মধ্যে নিজেকে একমাত্র মালিক দেখিয়ে সম্পূর্ণ জমির খাজনা প্রদান করে দাখিলা তৈরি করা হতো। অনলাইন সিস্টেমে এখন নির্দিষ্ট দাগভিত্তিক খাজনা প্রদান ও যাচাই হচ্ছে, ফলে এমন প্রতারণা ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে।

সরকারি পদক্ষেপ ও পরামর্শ:
বর্তমানে ভূমি মন্ত্রণালয় এবং তেজগাঁও ভূমি ভবনে “নাগরিক ভূমি সেবা কেন্দ্র” চালু হয়েছে, যেখানে সরাসরি বা অনলাইনে ভূমি সংক্রান্ত সেবা নেওয়া যাচ্ছে। যারা এখনো যৌথ জমির বণ্টননামা বা সঠিক নামজারি করেননি, তাদের এখনই এসব কাজ সম্পন্ন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু হলে জমি বিক্রয়ে এসব ছোটখাটো ফাঁক-ফোকরও আর থাকছে না।


ভূমি খাতের ডিজিটাল রূপান্তরের ফলে জমির নিরাপদ মালিকানা ও বিক্রয় ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। তবে পুরাতন পদ্ধতিতে থাকা জমির ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে, যা সময়মতো সমাধান না করলে ভবিষ্যতে সম্পত্তি বিক্রয় একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে।
 

মারিয়া

×