
ছবিঃ সংগৃহীত
কিডনি যখন বিপদে, শরীর দেয় সূক্ষ্ম বার্তা — আপনি কি শুনছেন?
আমরা যখন স্বাস্থ্য সমস্যার কথা ভাবি, কিডনির কথা অনেক সময় মাথায় আসে না। অথচ এই ছোট ছোট বীনাকৃতির অঙ্গ দুটি আমাদের দেহের বর্জ্য ছেঁকে ফেলা থেকে শুরু করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং শরীরের তরল ভারসাম্য বজায় রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে। কিন্তু যখন কিডনি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, তখন শরীর কিছু সংকেত দিতে শুরু করে — বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে যেগুলো আরও অস্পষ্ট হতে পারে।
অনেক সময় কিডনি সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণগুলো ক্লান্তি, স্ট্রেস বা হরমোনজনিত পরিবর্তন বলে ভুল করা হয়। তাই শরীরের যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তনের প্রতি নজর রাখা জরুরি।
১. চোখ ও গোড়ালির ফোলাভাব: কিডনির নিঃশব্দ আহ্বান
ভোরবেলায় চোখ ফুলে যাওয়া বা গোড়ালিতে হালকা ফোলাভাব আমরা সাধারণত ঘুম বা খাবারের লবণের ওপর দোষ চাপাই। তবে যদি নিয়মিত চোখ, পা বা গোড়ালিতে ফোলাভাব থাকে এবং বিশ্রামে কমে না, তাহলে বুঝতে হবে কিডনি তরল ছেঁকে ফেলতে পারছে না ঠিকমতো। এই অতিরিক্ত তরল শরীরে জমে ফোলাভাব তৈরি করে।
২. অস্বাভাবিক ক্লান্তি: হাড়ে-মজ্জায় বিধ্বস্ত ভাব
কাজের চাপে বা ঘুম কম হলে ক্লান্ত লাগা স্বাভাবিক। কিন্তু যদি ভালো ঘুমের পরেও আপনি সারাদিন অকারণে বিধ্বস্ত অনুভব করেন, তাহলে সেটি কিডনি সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। কিডনি এক ধরনের হরমোন তৈরি করে যেটি রক্তে অক্সিজেন বহনকারী লাল রক্তকণিকার উৎপাদন বাড়ায়। কিডনি দুর্বল হলে এই হরমোন কমে গিয়ে অ্যানিমিয়া ও ক্লান্তি সৃষ্টি করে।
৩. প্রস্রাবে অস্বাভাবিকতা: শরীরের ভেতরের এক্স-রে
প্রস্রাবের রঙ, গন্ধ বা ঘনত্ব আসলে আপনার শরীরের ভেতরের অবস্থা প্রকাশ করে। কিডনি ঠিকভাবে কাজ না করলে নিম্নলিখিত পরিবর্তন দেখা দিতে পারে:
-
অতিরিক্ত ফেনাযুক্ত বা বুদবুদযুক্ত প্রস্রাব
-
রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব
-
প্রস্রাবে রক্ত দেখা
-
গাঢ় রঙ বা ঘোলা প্রস্রাব
-
প্রস্রাব করার সময় জ্বালা বা ব্যথা
এই লক্ষণগুলো নিয়মিত দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
৪. হঠাৎ করে পেশিতে টান ধরা বা ক্র্যাম্প হওয়া
রাতে ঘুম ভেঙে যায় এমন হঠাৎ পায়ের পেশিতে টান লাগা? হতে পারে কিডনি সঠিকভাবে ইলেকট্রোলাইট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও সোডিয়াম-এর ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে এসব টান ধরা শুরু হয়।
৫. চুলকানি বা অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বক
যখন কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য অপসারণে ব্যর্থ হয়, তখন সেই টক্সিন শরীরে জমতে থাকে — এর ফলশ্রুতিতে ত্বক হয় শুষ্ক, রুক্ষ বা চুলকানিযুক্ত। অনেক সময় কোন লোশন দিয়েও এই চুলকানি বা অস্বস্তি কমানো যায় না।
এই উপসর্গগুলোকে অবহেলা করবেন না
নারীরা অনেক সময় এই লক্ষণগুলোকে বার্ধক্য, চাপ বা হরমোনজনিত পরিবর্তন মনে করে এড়িয়ে যান। কিন্তু এই উপসর্গগুলোর একটিও যদি নিয়মিত দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ অনেক সময় কিডনি রোগ ধীরে ধীরে বাড়ে এবং যখন টের পাওয়া যায়, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।
বিশেষভাবে নারীরা ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন বা ইউরিন ইনফেকশনে (UTI) বেশি আক্রান্ত হন। এই ইনফেকশন বারবার হলে কিডনি স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই এমন ইনফেকশন বা পিঠের নিচের দিকে ব্যথা অবহেলা না করাই ভালো।
আপনার কিডনিকে সুস্থ রাখুন সহজ নিয়মে
-
প্রচুর পানি পান করুন
-
রক্তচাপ ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখুন
-
অতিরিক্ত লবণ ও প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলুন
-
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
-
ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল পরিহার করুন
কিডনি রোগের ঝুঁকি যাদের বেশি
-
ডায়াবেটিস রোগী
-
উচ্চ রক্তচাপ
-
হৃদরোগ ও স্থূলতা
-
ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ
-
দীর্ঘমেয়াদে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন
-
কিডনি রোগের পারিবারিক ইতিহাস
-
বার্ধক্য
-
দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ বা অটোইমিউন রোগ
ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়মিত রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করানো উচিত, কারণ কিডনি সমস্যা অনেক সময় নিঃশব্দে বৃদ্ধি পায়।
স্মরণ রাখবেন, কিডনি খুব বেশি কিছু চায় না — শুধু একটু যত্ন। তাই যদি কিছু “অসাধারণ” মনে হয়, সেটিকে গুরুত্ব দিন। আপনার শরীরের সংকেত উপেক্ষা করবেন না।
ইমরান