
এবারের কোরবানির হাটে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে ‘রাজা বিক্রমপুর’ নামে পরিচিত বিশালদেহী ষাঁড়। পদ্মা পাড়ের লৌহজং উপজেলার সাতঘরিয়ার এক খামারে লালিত বেলজিয়াম ব্লু জাতের ষাঁড়টির ওজন ১২ শ’ ৬০ কেজি। দাম উঠছে ১৬ লাখ টাকা। খামারিদের দাবি-এ বছর এটিই বেলজিয়াম ব্লু জাতের সবচেয়ে বৃহৎ ষাঁড়।
খামার মালিক ও কর্মীরা জানাচ্ছেন, বিদেশি জাতের হলেও দেশীয় খাবার ও অর্গানিক পদ্ধতিতে পালন করা হয়েছে রাজকীয় এই পশুটিকে।
পদ্মা তীরের ওই খামারে মোট দুই হাজার গরুর মধ্যে কোরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩০০টির বেশি গরু। এর মধ্যে দেশি-বিদেশি নানা জাত রয়েছে। বেলজিয়াম ব্লু ছাড়াও ইউরোপীয় লিমোজিন ও শারোলাই, পাকিস্তানি শাহীওয়াল, ব্রাজিলের গির, নেপালের গির, ভুটানের ভুট্রি, অস্ট্রেলিয়ান অলস্ট্রেলিয়ান ফিজিয়ান এবং দেশি রেড চিটাগাং ও মিরকাদিমের ধবল গাই সবই রয়েছে।
ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে কোরবানির পশু পালনকে খামারিরা দেখছেন নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে। আর তাই পশুর স্বাস্থ্যের পাশাপাশি বাড়তি যত্নেও কোনো কমতি রাখছেন না তারা।
খামারে ষাঁড়টির দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মী মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, "আমরা একেবারে বাচ্চা বয়স থেকে ‘রাজা বিক্রমপুর’কে লালন-পালন করছি। কোনো প্রকার হরমোন বা কৃত্রিম কিছু খাওয়ানো হয়নি। ঘাস, খৈল, ভুষি আর ভুট্টা সব দেশীয় খাবারেই বড় হয়েছে। স্নেহে আর যত্নে মানুষ যেমন সন্তান বড় করে, তেমনি আমরাও তাকে বড় করেছি।"
ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোস্তফা কামাল বলেন, "আমাদের এখানকার খামারগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি ও পশুর সুরক্ষা নিয়ে কঠোর নজরদারি রাখা হয়। ‘রাজা বিক্রমপুর’-এর মতো পশুগুলো নিয়মিত আমাদের তত্ত্বাবধানে থাকে। শুধু আকারে বড় হলেই চলবে না—এদের সুস্থতা, সঠিক বয়স, রোগমুক্ত অবস্থা নিশ্চিত করাটাই মূল বিষয়। পশু কল্যাণ নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।"
তিনি আরও বলেন, আমরা এই কোরবানির ঈদে তিনটি ক্যাটাগরিতে পশু বিক্রি করছি। যেগুলোর ওজন ৪০০ কেজির মধ্যে আছে সেগুলো ৫৭০ টাকা লাইভ ওজনে বিক্রি করছি। আর যেসব পশুর ওজন ৪০০–৫০০ কেজি, সেগুলো বিক্রি করছি ৬০০ টাকা কেজি দরে। আর যেগুলো ৫০০ কেজির উপরে, সেগুলো আমরা ঠিকা হিসেবে বিক্রি করছি। আমাদের গরু লালন-পালনের জন্য ৩ জন ডাক্তার সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। এজন্য আমাদের গরুগুলো অন্যান্য গরু থেকে আলাদা। আমাদের এই খামারের বিশেষত্ব হচ্ছে আমরা গরু লালন-পালনের জন্য তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকি: জেনেটিক্স, কাউ কমফোর্ট ও নিউট্রিশন। এই তিনটি বিষয় সমন্বয় করে লালন-পালন করা হয়ে থাকে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম জানান, কোরবানির জন্য জেলায় এবছর চাহিদা রয়েছে ৬৯ হাজার ৭৭০টি পশুর। প্রস্তুত রয়েছে ৮১ হাজার ৭৭৫টি। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৫৯ হাজার ৮৭৭টি। এর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী মিরকাদিমের ধবল গাই রয়েছে ২০০টির মতো।
আফরোজা