ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

-

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ২ জুন ২০২৫

পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

সম্পাদকীয়

দেশে বর্ষা মৌসুম এলেই প্রায় প্রতিবছরই পাহাড়ধসে মৃত্যুর সংবাদ শোনা যায়। ঘূর্ণিঝড় কিংবা লঘুচাপে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে অতি বর্ষণে চট্টগ্রাম, সিলেট পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার বিভিন্ন পহাড়ে বসবাসরত মানুষের জীবন রয়েছে ঝুঁকিতে। সীতাকুণ্ডের পাহাড়ি এলাকায় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। এর মাঝে ধসের আশঙ্কাও প্রকট। অন্যদিকে খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন পাহাড়ের চূড়া কিংবা পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ৩৫ হাজার পরিবার।

পৌরসভার ৩০টি স্থানে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবারের বসবাস। সমাজের প্রান্তিক মানুষ নিরুপায় হয়ে পাহাড়ে বসবাস করছে। প্রতিবছরই অতি বর্ষণে পাহাড়ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, ঝুঁকিপূর্ণ এসব পাহাড় থেকে নাগরিকদের সরিয়ে দেওয়া হলেও পুনরায় তারা ফিরে আসে। 
পৌরসভার কুমিরা, সোনাইছড়ির পাহাড়ে বসতকারীদের ৫০ শতাংশই ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোক। তাদের পৈতৃক ভিটে-মাটি না থাকায় স্বাধীনতাপূর্ব সময় থেকে পাহাড় ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমিতে বসবাস করে আসছে। প্রতিবছর বর্ষা এলেই মাইকিং করা হয়। কিন্তু অসহায় মানুষ কোথায় যাবে? তাদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। পাহাড়ে বসতি গড়া মানুষ জানান, বহুবার ভূমির জন্য ধরনা দিয়েও তারা কোনো বরাদ্দ পাননি। নিরুপায় হয়ে পাহাড়ই তাদের শেষ ভরসা। বাধ্য হয়ে অন্যের জায়গায় অসহায় মানুষগুলো পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। সরকার ভূমি বরাদ্দ দিলে তারা সমতলে ফিরে যেতে চায়।
সারা বছর যেনতেনভাবে গেলেও বর্ষা মৌসুম এলেই বাড়তি চিন্তায় পড়ে প্রশাসন। বিভিন্ন সময় এখানে বড় আকারের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা করতে পারে না প্রশাসন। তবে, টানা বর্ষার সময় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে সমতল ভূমিতে নামতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু সুযোগ বুঝে তারা আবারও সেই ঝুঁকিপূর্ণ বসতিতে ফিরে যায়। ফলে, কয়েকবার পাহাড়ধসে সেখানে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

ভারি বর্ষা হলে শহরের কদমতলী, কুমিল্লাটিলা, মোল্লাপাড়া, সবুজবাগ, কলাবাগান, নেন্সিবাজার, কৈবল্যপিঠ, আঠারো পরিবার, শালবন ও মোহাম্মদপুরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের চূড়ায়, ঢালে কিংবা পাদদেশে যুগ যুগ ধরে অসহায়, প্রান্তিক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসবাস করে আসছে। মানুষ কতটা অসহায় হলে জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করে, তা সহজেই অনুমেয়। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের একান্ত প্রত্যাশা- এসব প্রান্তিক মানুষের জন্য স্থায়ী বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করা হোক।

×