ছবি:সংগৃহীত
বাংলাদেশের দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থায় এক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের পথে এগোলো দেশ। বহুল প্রতীক্ষিত সিভিল প্রসিডিউর কোড (CPC) সংশোধনী বিল ৬ মে জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। এই সংশোধনের মাধ্যমে দেশের দেওয়ানি মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির নতুন একটি দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এই আইনের জটিলতা ও মামলার দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে সাধারণ মানুষ, বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। সংশোধিত আইনটি সেই জট কমিয়ে এনে বিচার প্রক্রিয়াকে সময়োপযোগী ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে যাচ্ছে।
নতুন সংশোধনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো টাইম পিটিশনের সীমা নির্ধারণ। পূর্বে মামলার উভয় পক্ষ অসুস্থতা বা নানা অজুহাতে বারবার সময় চাইতে পারত, যার ফলে একটি মামলা নিষ্পত্তিতে বছর পার হয়ে যেত। সংশোধিত আইনে বাদী ও বিবাদী মাত্র দু’বার করে, সর্বমোট চারবার সময় চাইতে পারবে। এর মাধ্যমে মামলার অগ্রগতি থমকে যাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পাবে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলো সমন পাঠানোর পদ্ধতিতে। এখন থেকে সমন ডাকযোগে পাঠানোর পাশাপাশি ই-মেইল ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ডিজিটালি পাঠানো যাবে। এতে সমন প্রাপ্তিতে বিলম্ব হ্রাস পাবে এবং মামলার শুরু দ্রুততর হবে।
জবাব দাখিল প্রক্রিয়াতেও এসেছে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। এখন থেকে বিবাদীপক্ষের জবাব দাখিলের পর তা "পঠিত" হিসেবে গণ্য হবে, এবং মামলাটি সরাসরি পরবর্তী ধাপে চলে যাবে। আগে যেখানে একাধিক শুনানির মাধ্যমে দীর্ঘ সময় নষ্ট হতো, সেখানে এই পদ্ধতি বিচার প্রক্রিয়াকে অনেক দ্রুত করবে। একই সঙ্গে মামলা নিষ্পত্তির পর ‘ডিগ্রি জারির মামলা’ করতে হতো, যা নতুন আইনে আর প্রয়োজন হবে না। এখন রায়ের পরপরই আদালত প্রয়োজনীয় খরচ আদায়ের মাধ্যমে সরকারি বাহিনী পাঠিয়ে সম্পত্তি বুঝিয়ে দেবে, এলাকাবাসীকে জানিয়ে ও লাল পতাকা টাঙিয়ে।
আইনজীবী এবং বিচারপ্রার্থীরা এই সংশোধনিকে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। আইনজীবী মোঃ আমিনুল ইসলাম চৌধুরী সোহাগ জানান, “এই সংস্কার কেবল মামলার দীর্ঘসূত্রিতা কমাবে না, বরং বিচার ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা বাড়াবে। আমরা আধুনিক প্রজন্মের আইনজীবীরা সবসময় চাই মানুষ দ্রুত ন্যায়বিচার পাক, কোনোভাবেই তারা যেন বছরের পর বছর মামলা নিয়ে জিম্মি না হয়।”
সংশোধিত আইনের পূর্ণাঙ্গ প্রজ্ঞাপন চলতি মাসেই জারি হতে পারে বলে আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এই সংস্কারের বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থায় এক নতুন যুগের সূচনা ঘটবে।
মারিয়া
