
ছবি: সংগৃহীত
দেশের বিচার ব্যবস্থায় এসেছে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিনের জটিল ও সময়সাপেক্ষ দেওয়ানি মামলার প্রক্রিয়া এখন হবে আরও সহজ, দ্রুত ও প্রযুক্তিনির্ভর। ভূমি মালিকানা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে এখন আর বছর বছরের অপেক্ষা নয়— নতুন ব্যবস্থায় মাত্র কয়েক মাসেই মিলবে রায়, এমনকি তা বাস্তবায়ন করতেও আলাদা কোনো মামলা করতে হবে না।
বর্তমানে অনেকেই জমির মালিকানা থাকার পরেও দখল বুঝে পান না, কিংবা কেউ জমি দখল করে রাখলেও আদালতে গিয়ে রায় পেতে বছরের পর বছর কেটে যায়। এমন জটিল ও দীর্ঘসূত্রতায় ভোগা বিচার প্রক্রিয়াকে সহজ করতে সরকার এক নতুন ব্যবস্থা চালু করেছে, যেখানে সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকে শুরু করে সমন জারি, এমনকি দলিল যাচাই পর্যন্ত সব কিছুই আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।
কীভাবে বদলেছে প্রক্রিয়া?
নতুন ব্যবস্থায়, আগের মতো সাক্ষীদের মৌখিক সাক্ষ্য দিতে বারবার আদালতে উপস্থিত হতে হবে না। বরং সাক্ষ্যগুলো আগে থেকেই অ্যাফিডেভিট আকারে গ্রহণ করে তা আদালতে দাখিল করা যাবে। একই সঙ্গে, বিবাদীপক্ষকে সমন পাঠানো যাবে ডাকযোগ ছাড়াও এসএমএস, ইমেইল বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে, যা বিচারকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্যকর হবে।
সাক্ষীদের হাজির করানো এবং জবানবন্দি গ্রহণের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতির ফলে মামলার সময় অনেক কমে আসবে। আগে যেখানে একটি মামলার রায় পেতে ১০-১৫ বছর লেগে যেত, এখন তা ৬ মাস থেকে ২ বছরের মধ্যেই নিষ্পত্তি হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
আর নেই ডিক্রিজারির ঝামেলা
সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে রায় বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায়। আগে রায় পাওয়ার পরও আলাদাভাবে ‘ডিক্রিজারি মামলা’ করে তবেই জমি বুঝে নিতে হতো। এখন থেকে রায় ঘোষণার পরপরই আদালতের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন সরাসরি ভোগ দখল বুঝিয়ে দেবে। ফলে ভুক্তভোগীদের জন্য এটি একটি বিশাল স্বস্তির খবর।
ভূমি মালিকানা সনদ আসছে
এই পরিবর্তনের অংশ হিসেবে জুলাই মাস থেকেই চালু হতে যাচ্ছে "ভূমি মালিকানা সনদ"। এটি একটি কিউআর কোডযুক্ত ডিজিটাল ডকুমেন্ট, যা স্ক্যান করলেই জমি সংক্রান্ত সব তথ্য যাচাই করা যাবে। এতে করে মালিকানা নিয়ে বিভ্রান্তি বা প্রতারণার সুযোগ অনেকটাই কমে যাবে।
সময়সীমাও নির্ধারিত
আইন অনুযায়ী, এখন থেকে বাদী ও বিবাদী সর্বোচ্চ দুইবার করে মোট চারবার সময় চাওয়ার সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে। অর্থাৎ মামলা চালানোর নামে বছরের পর বছর সময় নষ্ট করার সুযোগ আর থাকছে না।
বিচার ব্যবস্থার এই আধুনিকায়নের ফলে দেশের ভূমি সংক্রান্ত মামলা ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের আশা, এই উদ্যোগ মামলার জট কমাবে, জমির প্রকৃত মালিকরা দ্রুত ন্যায়বিচার পাবেন এবং দুর্নীতির সুযোগ অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
আসিফ