ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বছরের পর বছর যে সমস্যায় ভুগছিলেন, তা কমাতে পারে এই ১০ মিনিট হাঁটা!

প্রকাশিত: ০৮:১৩, ৩ জুন ২০২৫

বছরের পর বছর যে সমস্যায় ভুগছিলেন, তা কমাতে পারে এই ১০ মিনিট হাঁটা!

ছবি: সংগৃহীত

জীবন অনেক দ্রুত গতিতে চলছে—পরিবারের দেখভাল, বাড়ির দায়িত্ব কিংবা একসাথে অনেক কিছু সামলানোর চাপে। লম্বা সময় ধরে ব্যায়াম করা যেন আজকাল এক বিলাসিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ১০ মিনিটের হাঁটাও আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতা এনে দিতে পারে। অনেকেই মনে করেন, কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটতে না পারলে সেটা কোনও কাজের নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ছোট ছোট মাইন্ডফুল হাঁটাগুলিও শরীরের জন্য যথেষ্ট উপকারী হতে পারে।

১. শরীরের প্রদাহ হ্রাস করে
মাত্র ১০ মিনিট হাঁটার মাধ্যমেই শরীরে প্রদাহের মাত্রা কমতে শুরু করে—এমনকি যদি আপনি অলস জীবনযাপন করেন বা হালকা জয়েন্ট ব্যথায় ভোগেন।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ মিনিটের হাঁটা শরীরে উপস্থিত প্রো-ইনফ্ল্যামেটরি (প্রদাহ সৃষ্টি করে এমন) উপাদানগুলো হ্রাস করতে পারে। যারা প্রতিদিন ক্লান্তি, পেট ফাঁপা বা হালকা ব্যথায় ভোগেন—যেগুলোর পেছনে নিঃশব্দ প্রদাহ থাকতে পারে—তাদের জন্য এটি একটি সহজ ও কার্যকর উপায় হতে পারে।

২. খাওয়ার পর রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সবার জন্যই জরুরি। আর খাবার খাওয়ার ঠিক পরেই মাত্র ১০ মিনিট হাঁটলে সেটি অনেকটাই সম্ভব।

একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, খাবারের পর পর হালকা গতির ছোট হাঁটা সারাদিনে একবার দীর্ঘ হাঁটার তুলনায় রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে বেশি কার্যকর। হাঁটার সময় পায়ের পেশিগুলো সক্রিয় হয়ে রক্ত থেকে চিনি শোষণ করে, যা স্বাভাবিকভাবে রক্তে চিনির পরিমাণ কমায়।

৩. অতিরিক্ত চিন্তা ও মানসিক বিশৃঙ্খলা কমায়
মনকে শান্ত করতে দীর্ঘ মেডিটেশন বা থেরাপি সেশন প্রয়োজন নয়। মাত্র ১০ মিনিটের বাইরে হাঁটা—এমনকি যদি সেটা রাস্তার পাশে বা বারান্দায় হয়—মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

এটি শুধু অভিজ্ঞতালব্ধ নয়, বরং বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। হাঁটা সৃজনশীল চিন্তাভাবনা বাড়ায় এবং উদ্বেগ বা বিষণ্নতার সাথে সম্পর্কিত পুনরাবৃত্ত চিন্তাগুলো কমায়। হাঁটার ছন্দবদ্ধ গতি একটি প্রাকৃতিক ‘ক্যাল্মিং অ্যাঙ্কর’ হিসেবে কাজ করে, যা বিশেষ করে অভিভাবকদের জন্য মানসিক শান্তি এনে দেয়।

৪. প্রাকৃতিকভাবে ‘সুখের হরমোন’ সক্রিয় করে
শুধু তীব্র ব্যায়ামেই সুখদায়ক হরমোন যেমন ডোপামিন বা সেরোটোনিন নিঃসরণ হয়—এই ধারণা ভুল।

সাধারণ ১০ মিনিটের হালকা হাঁটাও, বিশেষ করে রোদে, এই হরমোনগুলো নিঃসরণে সহায়তা করে। আলো ও নরম গতি মিলিয়ে দেহে এন্ডরফিন নিঃসরণ বাড়ে, যা মন ভালো করে। এমনকি এটি সিজনাল এফেক্টিভ ডিজঅর্ডার (ঋতুভিত্তিক বিষণ্নতা)-এর চিকিৎসায়ও ব্যবহার হয়। তাই হালকা রোদে ছোট্ট এক হাঁটা মানে স্বাভাবিক ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন মুড স্ট্যাবিলাইজার।

৫. ঘুমের মান উন্নত করে দেহঘড়ি (বডি ক্লক) ঠিক করে
ভালো ঘুমের জন্য জিমে যেতে হবে বা যোগব্যায়াম করতে হবে—এই ধারণাও অপ্রয়োজনীয়। বরং সকালবেলা নিয়মিত ছোট হাঁটা দেহের প্রাকৃতিক ঘুমের ছন্দ ঠিক করে।

সকালের হাঁটা মেলাটোনিন উৎপাদনের সময়ের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখে, যার ফলে রাতের ঘুম গভীর হয়। এতে ঘন ঘন ঘুম ভাঙা বা দীর্ঘক্ষণ ঘুম আসতে না পারার সমস্যা কমে—তাও আবার কোনও যন্ত্র বা হারবাল চায়ের প্রয়োজন ছাড়াই।

৬. মেরুদণ্ড ও পেশিগুলো সচল ও দৃঢ় করে
একটু সচেতনভাবে হাঁটলে—বিশেষ করে সোজা মেরুদণ্ড, রিলাক্সড কাঁধ, এবং ঠিকঠাক পা ফেলার দিকে মনোযোগ দিলে—শরীরের গভীর পেশিগুলো সক্রিয় হয়।

হাঁটা খুব সাধারণ মনে হলেও, ঠিক ভঙ্গিমায় করলে এটা যেন চলন্ত যোগব্যায়ামের মতো কাজ করে। ধীরে ধীরে এটি শরীরের ভঙ্গিমা উন্নত করে, কোমরের ব্যথা কমায় এবং ভারসাম্য রক্ষা করে। এটি বিশেষ করে প্রসব-পরবর্তী সময় বা দীর্ঘ সময় বসে থাকার পর শরীর পুনরুদ্ধারে সহায়ক।

পরিশেষে, মাত্র ১০ মিনিট—এই ছোট সময়টুকুই দৈনন্দিন জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। ব্যস্ততার মাঝেও এই স্বল্প সময়ের হাঁটা আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য এক শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।

আবির

×