ছবি: জনকণ্ঠ
রাজধানীর ধানমন্ডির ব্যস্ত রাস্তায় প্রতিদিন হাজারো মানুষ যাতায়াত করেন। ব্যস্ততা, ক্লান্তি আর শহরের শব্দমালায় হারিয়ে যায় অনেক কিছু। কিন্তু কোনো কোনো দিন এমন কিছু দৃশ্য আমাদের সামনে আসে, যা চোখে ধরা পড়ে ঠিকই, কিন্তু লেগে থাকে হৃদয়ের গহীনে। গতকাল (২ জুন, সোমবার) দুপুরে, ঠিক এমনি এক মুহূর্তে, শহরের কোলাহলে ধরা দিল এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। মাথায় হিজাব, চোখে চশমা, আর রিকশার হ্যান্ডেলে দৃঢ় দুটি হাত— যার পেছনে বসে আছেন দুইজন পুরুষ যাত্রী।
পুরুষদের আধিপত্যে থাকা এই পেশায় একা নারীর এমন উপস্থিতি পথচারী ও যাত্রীদের কৌতূহল এবং সম্মানের চোখে তাকাতে বাধ্য করছে। এই সাহসী নারীর নাম, পরিচয় বা পেছনের গল্প এখনো জানা যায়নি, তবে তাঁর এই উদ্যোগ ইতোমধ্যেই শহরে হাজারো মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও নারীরা যে এখন সাহসের সঙ্গে এগিয়ে আসছেন, সেটিরই বাস্তব উদাহরণ ধানমন্ডির এই দৃশ্য।
একজন পথচারী বলেন, “এই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। আমরা অনেক সময় নিজেদের সমস্যাকে বড় করে দেখি। কিন্তু এই নারী যেভাবে পুরুষদের যাত্রী করে রিকশা চালাচ্ছেন, সেটা আমাদের জন্য বড় অনুপ্রেরণা।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, "নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়াতে এমন ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তার এই প্রচেষ্টা শুধু কর্মসংস্থান নয়, বরং সমাজে নারীর অবস্থানকে আরও দৃঢ় করার এক সাহসী পদক্ষেপ।
সামাজিক বাধা ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো দূর করতে পারলে আরও অনেক নারী এমন পেশায় যুক্ত হতে পারবেন।"
ইচ্ছা থাকলে যে সমাজের বাঁধাধরা দৃষ্টিভঙ্গিকে উপেক্ষা করে, নিজের জীবন ও পরিবারের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা যায় এই নারী যেন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে সেটিই দেখিয়ে দিয়েছেন। তার পোশাকে ছিলো ধর্মীয় শালীনতার স্পষ্ট ছাপ, কিন্তু চোখে ছিল আত্মবিশ্বাস আর ক্লান্তিহীন দৃঢ়তা। রিকশার প্রতিটি চাকা ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে সমাজের গতিও একটু একটু করে বদলাচ্ছে। প্রতিটি চাকা ঘোরানোর শব্দ যেন সমাজে আছড়ে পড়ে: "আমি আছি, আমি পারি, আমিও বদল আনতে পারি।"
সংসার, জীবন কিংবা দারিদ্র্য—যাই থাকুক না কেন, মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাওয়ার শক্তিই এক নারীর সবচেয়ে বড় পরিচয়। নারীর ক্ষমতায়ন কেবল স্লোগানে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবে রূপ দিতে হলে, এমন প্রতিটি সাহসী পদক্ষেপকে সম্মান জানানো এবং উৎসাহ দেওয়া জরুরি।
আবির
