ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হ্যাচারিতে চলছে রেণু ফোটানোর তৎপরতা

এবার হালদা থেকে রেকর্ড পরিমাণ ডিম সংগ্রহ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ০০:৩৪, ২ জুন ২০২৫

এবার হালদা থেকে রেকর্ড পরিমাণ ডিম সংগ্রহ

.

দেশের মিঠা পানির মৎস্য প্রজননের একমাত্র উৎস চট্টগ্রামের হালদা নদীতে এবার রেকর্ড পরিমাণ ডিম সংগৃহীত হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় বহুগুন বেশি। এসব ডিম হ্যাচারিতে রেখে এখন পোনা ফোটানোর কাজে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে সংগ্রহকারীরা।
দক্ষিণ এশিয়ায় কার্প জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহের অন্যতম প্রাকৃতিক উৎস হালদা নদীতে ডিম ছাড়ে মা মাছ। হালদা তীরে দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কেজি পরিমাণ ডিম সংগ্রহ হয়েছে। কাক্সিক্ষত হালদার মা মাছের ডিম পেয়ে খুশি সংগ্রহকারীরা।
দেশব্যাপী হালদার পোনার চাহিদা ব্যাপক। ভালো মানের পোনার জন্য হালদার রেণু পোনা বিখ্যাত। এ জন্য দেশের বিভিন্ন জেলার মৎস্যচাষীরা হালদার পোনা সংগ্রহ করেন এ সময়ে। সমন্বিতভাবে নদী ব্যবস্থাপনায় সফলভাবে পরিচালনা, মা মাছ রক্ষায় মৎস্য অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন ও নৌ পুলিশের ব্যাপক অভিযান, রাবার ড্যামের পানি ছেড়ে দেওয়া, পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও যথাসময়ে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামা এবং অমাবস্যার জো থাকার কারণে এবার প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদায় বেশি ডিম দিয়েছে মা মাছ।
মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, মা মাছ রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগের কারণে এবার হালদা পাড়ের রেকর্ড ডিম সংগ্রহ হয়েছে। ২৫০টি নৌকা ও সাড়ে ৫০০ ডিম সংগ্রহকারী ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে সফলভাবে ডিম সংগ্রহ করেছেন।  জোরদার অভিযান, মা মাছ রক্ষা এবং অমাবস্যার জো থাকার কারণে এবার ভাল ডিম সংগ্রহ হয়েছে।
মূলত হালদা নদীর মদুনাঘাটের কাছে রামদাস মুন্সিরহাট, আমতুয়া, নাপিতার গোনা, আজিমের ঘাট, মাচুয়া ঘোনা, কাগতিয়া হাট, আইডিএফ হ্যাচারি, সিপাহীঘাট, নোয়াহাট, বইজ্জ্যাখালী, কেরামত আলীর বাঁক এবং অঙ্কুরিগোনাসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ডিম সংগ্রহের উৎসব ছিল লক্ষণীয়। এখন চলছে হালদা পাড়ের হ্যাচারীগুলোতে রেণু ফোটানোর কাজ। প্রত্যেকটি হ্যাচারি এখন ব্যস্ত সময় পার করছে রেণু পোনা ফোটানোর কাজে।
অপরদিকে হালদার ডিম সংগ্রহকারীরা জানিয়েছেন, হালদা যেখানে কর্ণফুলী নদীতে মিশেছে, কালুরঘাট সেতু সংলগ্ন অংশ থেকে উজানে মদুনাঘাট হয়ে নাজিরহাট পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার অংশে নদীর দুই তীরে হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়ি এই তিন উপজেলায় মা মাছের আনাগোনা থাকে এ মৌসুমে। তবে নিষিক্ত ডিম মেলে মদুনাঘাট থেকে সমিতির হাট পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার অংশে। যা হাটহাজারী এবং রাউজান অংশে। বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকেই ডিম সংগ্রহকারীরা ব্যাপক কাক্সিক্ষত হালদার মা মাছের ডিম সংগ্রহ করেছেন।
জানা গেছে, ২০২৪ সালে ডিম ছাড়েনি হালদার মা মাছ। শুধু ১ হাজার ৬৮০ কেজি ডিম পাওয়া গিয়েছিল কয়েক দফায়, তাও সেগুলো নমুনা ডিম। তবে এর আগে ২০২৩ সালে ডিম সংগ্রহ হয়েছিল ১৪ হাজার ৬৬৪ কেজি। হালদা নদীতে বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত একেক সময়ে বজ্রসহ বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢল নামলে অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে জোয়ার ও ভাটার সময়ে নিষিক্ত ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। নদীতে কালিবাউশ, রুই, কাতল, মৃগেল মাছের ছাড়া ডিম বিশেষ জাল দিয়ে সংগ্রহ হয়। পরে হ্যাচারিতে তা থেকে রেণু পোনার জন্ম হয়।
হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্য মতে, ২০২২ সালে হালদা থেকে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কেজি এবং ২০২১ সালে সাড়ে ৮ হাজার কেজি ডিম পেয়েছিলেন সংগ্রহকারীরা। ২০২০ সালে পাওয়া যায় সাড়ে ২৫ হাজার কেজি ডিম। ২০১৯ সালে ১০ হাজার কেজি, ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে ১৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮শ’ কেজি, ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫শ’ কেজি, ২০১৩ সালে ৪ হাজার ২শ’ কেজি, ২০১২ সালে ২১ হাজার ২৪০ কেজি ডিম সংগ্রহ হয়েছিল। তবে ২০০৬ সালে ৩২ হাজার ৭২৪ কেজি ডিম পাওয়া যায়। যা ছিল রেকর্ড।

প্যানেল

×