ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হাঁটু দিয়ে ভারতীয় নাগরিকের গলা চেপে ধরল পুলিশ!

প্রকাশিত: ১৫:৩৬, ৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৫:৩৯, ৩ জুন ২০২৫

হাঁটু দিয়ে ভারতীয় নাগরিকের গলা চেপে ধরল পুলিশ!

ছবি:সংগৃহীত

২০২০ সালে আমেরিকায় জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর বিভীষিকাময় স্মৃতি যেন আবার ফিরে এল অস্ট্রেলিয়ায়। হাঁটু দিয়ে গলা চেপে ধরার সেই একই পুলিশি কৌশল এবার দেখা গেল অ্যাডিলেডের রাস্তায়। আর তার শিকার ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুবক গৌরব কুন্ডি, বর্তমানে তিনি কোমায়, লাইফ সাপোর্টে।

 

 

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩০ মে বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড শহরের ইস্টার্ন সাবার্বে গৌরব এবং তাঁর স্ত্রী অমৃতপাল কউরের মধ্যে রাস্তার ওপর কথাকাটাকাটি হয়। এ সময় টহলরত পুলিশের একটি গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি গার্হস্থ্য হিংসা হিসেবে ভুলভাবে ধরে নেয়। যদিও অমৃতপাল পুলিশের কাছে স্পষ্ট করেন যে এটি কোনো গার্হস্থ্য সহিংসতার ঘটনা নয়, বরং তাঁর স্বামী কিছুটা মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন এবং উচ্চস্বরে কথা বলছিলেন মাত্র।

তবুও পুলিশ গৌরবকে আটক করার চেষ্টা করে। স্ত্রী অমৃতপাল কউরের দাবি, পুলিশ অফিসারদের একজন গৌরবকে রাস্তায় ফেলে তাঁর গলা হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে। গৌরব তখন অসহায় কণ্ঠে বলেন, “আমি কিছু করিনি, আমি নির্দোষ।” তাঁর স্ত্রী তখন বারবার অনুরোধ করছিলেন পুলিশকে যেন গৌরবকে ছেড়ে দেওয়া হয়, কিন্তু অভিযোগ অনুযায়ী, পুলিশ সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে।

 

 

 

 

পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয় যখন গৌরব হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। অমৃতপালের অভিযোগ, পুলিশ তাঁকে গাড়িতে তোলার সময় গৌরবের মাথা জোরে জোরে গাড়ির গায়ে ঠুকে দেয়। গৌরবের অবস্থা খারাপ হতে থাকলে অবশেষে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, তাঁর মস্তিষ্ক গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তিনি কোমায় চলে গেছেন।

অন্যদিকে, নাইন নিউজ-এর কাছে পুলিশের বক্তব্য ছিল ভিন্ন। তারা জানিয়েছে, গ্রেফতার এড়াতে গৌরব শারীরিকভাবে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন, এবং এই অবস্থায়ই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন।

 

 

ঘটনার ভিডিও না থাকলেও, এই নির্মম ব্যবহার অনেককে মনে করিয়ে দিয়েছে জর্জ ফ্লয়েডের সেই করুণ মৃত্যুর কথা। ২০২০ সালের মে মাসে মিনিয়াপোলিসে পুলিশের হাঁটু চাপে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড। ঘটনার ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল, ফ্লয়েড বারবার বলছেন, “আমি শ্বাস নিতে পারছি না।” সেই ঘটনায় সারা বিশ্বে উত্তাল হয়ে ওঠে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলন, এবং অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিন বর্তমানে কারাবন্দি।

অস্ট্রেলিয়ায় গৌরব কুন্ডির সঙ্গে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক এই ঘটনা আবারও বিশ্বজুড়ে পুলিশি হেফাজতে নিষ্ঠুরতার প্রশ্ন তুলে ধরছে। বিশেষত জাতি, অভিবাসন ও ক্ষমতার ব্যবহারের প্রশ্নে এ ধরনের ঘটনা আরও গভীর উদ্বেগ তৈরি করছে।

আঁখি

×