ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নাগেশ্বরীতে সেনাবাহিনীর অভিযানে সাড়ে ৭ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল উদ্ধার

মিজানুর, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম।

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ৫ জুন ২০২৫

নাগেশ্বরীতে সেনাবাহিনীর অভিযানে সাড়ে ৭ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল উদ্ধার

ঈদের আগেই ভিজিএফের চাল পাওয়ার আশায় ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শত শত দরিদ্র মানুষ। কিন্তু তাদের কপালে জুটেছে না চাল, বরং হতাশা আর ক্ষোভ। এই দৃশ্যের ঠিক উল্টো চিত্র দেখা গেছে ইউনিয়ন পরিষদের পাশের কয়েকটি গুদামেসেখানে মজুদ ছিল ৭.৫ মেট্রিক টন সরকারি সহায়তার চাল। অভিযান চালিয়ে চালগুলো উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী।

সরকার ঈদুল আজহা উপলক্ষে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের ৮ হাজার দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দ দিয়েছিল ৮০ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল। প্রতি পরিবারকে দেওয়ার কথা ছিল ১০ কেজি করে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, চাল বিতরণের আগেই ওই চালের স্লিপ গোপনে বিক্রি করে দেন ইউপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খাদিজা বেগমসহ কয়েকজন সদস্য। পরে সেই স্লিপ ব্যবহার করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী চাল উত্তোলন করে গুদামে মজুদ করে রাখেন।

স্থানীয় দুই বাসিন্দা হাফিজুর রহমান ও আমিনুর রহমান জানান, প্রথমে কয়েকজন সাধারণ মানুষকে চালের স্লিপ দেওয়া হলেও বাকি স্লিপগুলো গোপনে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এরপর তাঁরা সেনাবাহিনীকে তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ জানালে ৪ জুন বিকেলে অভিযান পরিচালিত হয়। ইউএনও, পিআইও এবং পুলিশের সহায়তায় চালানো সেই অভিযানে স্থানীয় বাজার এলাকার কয়েকটি গুদাম থেকে উদ্ধার হয় ৭.৫ মেট্রিক টন চাল। তবে অভিযানের সময় অভিযুক্তরা পলায়ন করেন।

সংশ্লিষ্ট গুদামগুলোতে চাল মজুদের কোনো বৈধ স্টক ডকুমেন্ট ছিল না। তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, “যেটুকু উদ্ধার হয়েছে, তা দৃশ্যমান অংশ মাত্র। ধারণা করা হচ্ছে, আরও বিপুল পরিমাণ চাল এরই মধ্যে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে।”

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ইউপি সদস্যরা আগেই একটি 'সিন্ডিকেট' গড়ে তুলেছিলেন। নির্বাচিত দরিদ্র মানুষের নাম ব্যবহার করে স্লিপ ছাপিয়ে গোপনে তা বিক্রি করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, “আমার চাচার নাম তালিকায় থাকলেও তিনি কোনো চাল পাননি। অথচ তার নামে কেউ স্লিপ দিয়ে চাল তুলে নিয়েছে।”

অপর বাসিন্দা আমিনুর রহমান জানান, “এক ব্যবসায়ী স্বীকার করেছেন তিনি টাকা দিয়ে ১০০টি স্লিপ কিনেছেন। ওই চাল গুদামে রেখেছেন, পরে বেশি দামে বিক্রির পরিকল্পনা ছিল তার।”

এ বিষয়ে সন্তোষপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খাদিজা বেগম দাবি করেন, “পরিষদের বাইরে কোনো ইউপি সদস্য স্লিপ বিক্রি করলে সে বিষয়ে আমি জানি না।”তবে প্রশ্ন উঠছে যে স্লিপ পরিষদ থেকে ইস্যু হয়েছে, সেখানে প্রধান হিসেবে চেয়ারম্যান কীভাবে অজ্ঞ থাকতে পারেন?

নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিব্বির আহমেদ বলেন, “যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
তবে ৪ জুন রাত পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মামলা হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কারও বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের, গ্রেপ্তার বা জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

আফরোজা

×