
জনগণের ক্ষোভ ও রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার মধ্যে আস্থাভোটে হেরে মঙ্গোলিয়ার প্রধানমন্ত্রী লুভসাননামস্রাইন ওইউন-এর্দেনে পদত্যাগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তাঁর ছেলের বিলাসী জীবনযাপন নিয়ে দেশজুড়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।
সংস্কারপন্থী ওইউন-এর্দেনে ২০২১ সাল থেকে মঙ্গোলিয়ার নেতৃত্বে ছিলেন। মঙ্গলবার ভোররাতে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্টের আস্থাভোটে প্রয়োজনীয় ৬৪ ভোটের মধ্যে তিনি পেয়েছেন মাত্র ৪৪ ভোট। দলীয় বিভাজন ও ছেলের জীবনযাপন ঘিরে চলমান বিক্ষোভের মধ্যে গত সপ্তাহেই তিনি নিজেই এই ভোট আহ্বান করেছিলেন।
এক বছর আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর থেকে মঙ্গোলীয় পিপলস পার্টি (MPP) দুটি দলের সঙ্গে জোট সরকার গঠন করে আসছে। ধারণা করা হচ্ছে, শিগগিরই নতুন সরকার গঠনের চেষ্টা চালাবে তারা।
এ রাজনৈতিক অস্থিরতা এমন এক সময়ে তৈরি হলো, যখন দেশটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একদলীয় সমাজতান্ত্রিক শাসন থেকে বেরিয়ে এসে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হয়েছে এবং সম্প্রতি পার্লামেন্ট সম্প্রসারণ করেছে।
ওইউন-এর্দেনে পশ্চিমা খনিসম্পদ কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে দেশের বিপুল পরিমাণ তামা, ইউরেনিয়াম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের সদ্ব্যবহার করতে চেয়েছেন। এ ধরনের বিনিয়োগ মঙ্গোলিয়াকে চীনের বেইজিং ও রাশিয়ার মস্কোর চাপ থেকে কিছুটা কৌশলগত সুরক্ষা দিত।
তাঁর নেতৃত্বে সরকার ৩.৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার দেশটিতে দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। এ লক্ষ্য পূরণে প্রত্যাশা ছিল দীর্ঘমেয়াদি বিদেশি বিনিয়োগ, বিশেষ করে খনিজ উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে। ২০২২ সালে ১৫ বিলিয়ন ডলারের জিডিপি ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার উচ্চাকাঙ্ক্ষাও ছিল।
ভোটাভুটির আগে পার্লামেন্টে দেওয়া এক বক্তব্যে ওইউন-এর্দেনে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আক্রমণ এবং দৃশ্যমান ও অদৃশ্য স্বার্থের মিলন ঘটেছে। তিনি তাঁর নেতৃত্বে রপ্তানি আয় ও জিডিপি বৃদ্ধির মতো অর্থনৈতিক অর্জনের কথা উল্লেখ করেন। ফ্রান্সের ওরানো গ্রুপের সঙ্গে ১.৬ বিলিয়ন ডলারের ইউরেনিয়াম প্রকল্পের চুক্তিকেও তিনি ‘মেগা প্রজেক্ট’-এর অংশ হিসেবে তুলে ধরেন।
তবে তিনি স্বীকার করেন, সামাজিক ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে তিনি যথেষ্ট মনোযোগ দেননি।
মঙ্গোলিয়া বিজনেস কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ার ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানিখাতের বিনিয়োগকারী বায়ানজারগাল বায়াম্বাসাইকান বলেন, “যদিও অনেক বড় প্রকল্প ইতোমধ্যে চলমান, তবুও পরবর্তী সরকারের সামনে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও কমে আসা রপ্তানি আয়ের মতো বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।”
তিনি বলেন, “জোট রাজনীতি কখনোই সহজ নয়। মঙ্গোলিয়া একটি সংগ্রামী গণতন্ত্র, তাই রাজনৈতিক পরিবর্তন বিনিয়োগকারীদের মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।”
সূত্র - https://www.ft.com/content/dfb6ad95-6c55-4d40-8e25-d5f4955397bc
সানজানা