
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম বুধবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন
এখন থেকে ভুল সংবাদ প্রকাশ করে মানুষকে বিভ্রান্ত করলে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
তিনি বলেছেন, আমরা লক্ষ্য করেছি অনেক সময় ভুল তথ্য আসে। আমরা চেষ্টা করি আপনাদের সঠিক তথ্য দিয়ে ভুল সংবাদগুলো ধরিয়ে দিতে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ব্যাপারে উদার, আমরা সমালোচনাকে সব সময় স্বাগত জানাই। তবে কাউকে এ রকম লাইসেন্স দেওয়া হয়নি যে তিনি চাইলেই একটা ভুল সংবাদ প্রকাশ করবেন। যারা এখন থেকে এ ধরণের ভুল, বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করবেন সরকার তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বুধবার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় প্রেস সচিব শফিকুল আলম, সিনিয়র সহকারি প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।
উপ-প্রেস সচিব বলেন, ‘আজকে আপনারা দেখেছেন একটা সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদসহ শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে। এই খবরটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর। এ বিষয়ে যে সব সংবাদমাধ্যম ভুল, বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করেছে, আমরা আশা করবো তারা ভুল সংশোধন করবেন, তাদের পাঠকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করবেন, বাংলাদেশের মানুষ, যাদের বিভ্রান্ত করেছেন তাদের কাছেও দুঃখ প্রকাশ করবেন।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুকের সাক্ষাৎ নিয়ে বলেন, আপনারা জানেন প্রধান উপদেষ্টা আগামী ৯ থেকে ১৩ তারিখ ইউকে (যুক্তরাজ্য) সফরে যাচ্ছেন। সেখানে তিনি ‘কিং চার্লস হারমনি’ অ্যাওয়ার্ড পাবেন। বুধবার মিটিংয়ে জানানো হয়, প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার মিটিং হবে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যাচ্ছেন সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ও দুদকের চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন।
মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাদ সংবাদটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর- প্রেস উইং ॥ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন-২০২২ সংশোধন করে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগ থেকে অধ্যাদেশ জারির পর থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী রাজনীতিবিদের (এমএনএ/এমপিএ) ‘বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি’ থেকে বাদ দেওয়ার খবর প্রকাশ হয়েছে। তবে এসব খবরকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর’ বলে উল্লেখ করেছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস উইং।
ফেসবুকে ‘সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস’ পেজে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং দুই মন্ত্রী মো. মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানসহ শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল বলে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, মুজিবনগর সরকারে যারা ছিলেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধা। যারা সশস্ত্রভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছে; যারা পরিচালনা করেছে, তারাও মুক্তিযোদ্ধা। তবে ওই সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা।
উপদেষ্টা আরও জানান, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশ অনুযায়ী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রসহ কূটনীতিকরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা। সহযোগী মানে এই নয়, যে তাদের সম্মান ক্ষুণœ করা হয়েছে। ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধার যে সংজ্ঞা ছিল সেটাই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০১৮ ও ২০২২ সালে এটা পরিবর্তন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী দুইয়েরই সম্মান, মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা একই থাকবে।