
ষাটোর্ধ্ব আবদুস সাত্তার ব্যস্ততার সঙ্গে ঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। বাড়ির অন্য সদস্যরা জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন তড়িঘড়ি করে। তবু সব কিছু রক্ষা করা যাচ্ছে না—কিছু জিনিসপত্র ইতোমধ্যেই ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে হারিয়ে গেছে।
এ কষ্ট শুধু আবদুস সাত্তারের একার নয়—চরম দুর্ভোগে পড়েছে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার শাখাহাতি ও কড়াইবরিশাল চরের হাজারো মানুষ। ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙন এই ঈদের আনন্দকে মাটি করে দিয়েছে। কাল ঈদ, অথচ এসব গ্রামের মানুষের মুখে হাসি নেই। কেউ জানে না কাল কী খাবে, কোথায় ঘুমাবে।
বাড়িঘর হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছে আশেপাশের উঁচু জায়গা, স্কুল-মাদ্রাসা কিংবা অন্যের উঠানে। সেখানেই কাটছে কয়েকশ মানুষের দিনরাত। চরম কষ্ট আর অনিশ্চয়তায় কাটছে জীবন।
শুক্রবার (৬ জুন) দিনভর ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার দ্বীপচর শাখাহাতি ও কড়াইবরিশালে ঘুরে দেখেছেন জনকণ্ঠ-এর প্রতিবেদক। দেখা গেছে নদীভাঙনের ভয়াবহ রূপ, মানুষের আহাজারি আর কান্না।
গত ১৫ দিনে দুটি চরে নদী ভাঙনে শত শত বিঘা জমি, ঘরবাড়ি, স্কুল, মাদ্রাসা, কমিউনিটি ক্লিনিক, সাবমেরিন কেবলের বিদ্যুতের খুঁটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে দুই গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার।
স্থানীয়রা জানান, তাদের মাঝে ঈদের কোনো আমেজ নেই। কড়াইবরিশাল ও শাখাহাতি গ্রামের আবদুল হক, সাহেরা খাতুন, মোজাম্মেল হক, আশরাফুল ইসলাম, লিটন মিয়া, আবদুস সামাদ ও মিনারা বেগম বলেন, "আমাদের গ্রামে ঈদের কোনো আনন্দ নেই। কেউ কোরবানি দেবে না। নদীর ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে গেছি। খাবারের টাকাও নেই। ধার-দেনায় চলছে জীবন।"
চিলমারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সবুজ কুমার বসাক জানান, “ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে দুটি চর গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে আমরা ৫০টি পরিবারকে ঈদ উপহার প্যাকেট দিয়েছি। প্রয়োজনে আরও সহায়তা দেওয়া হবে।”
ঈদ উপহার সামগ্রীর মধ্যে ছিল চাল, ডাল, তেল, লবণ, মরিচ, হলুদ ও চিনি।
চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, “ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে কড়াইবরিশাল ও শাখাহাতির মানুষ। তাদের মাঝে ঈদের কোনো আনন্দ নেই।”
সানজানা