
ছবিঃ সংগৃহীত
আমাদের দেশের বাজারে সাধারণত দুই ধরনের ডিম দেখা যায়—একটি সাদা খোলসের, অন্যটি লাল খোলসের। অনেকেই ভাবেন, দাম বেশি মানেই পুষ্টি বেশি। তাই কেউ লাল ডিমকে বেশি পুষ্টিকর মনে করেন, আবার কেউ বলেন—ডিমের রঙে কিছু আসে-যায় না। তাহলে আসলেই কি ডিমের রঙের সঙ্গে পুষ্টিগুণের কোনো সম্পর্ক আছে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিমের রঙ নির্ভর করে মুরগির জাত ও জিনগত বৈশিষ্ট্যের উপর। সাধারণভাবে, সাদা পালকের মুরগি যেমন 'হোয়াইট লেগহর্ন' সাদা ডিম পাড়ে। আর গাঢ় রঙের পালকবিশিষ্ট জাত যেমন 'রোড আইল্যান্ড রেড' বা 'প্লাইমাউথ রক' লাল বা বাদামি খোলসের ডিম দেয়। মূলত মুরগির জরায়ুর একধরনের রঞ্জক পদার্থ ডিমের খোলসের রঙ নির্ধারণ করে। সব ডিমের খোলস শুরুতে সাদাই থাকে, পরে যোগ হয় রঙ।
পুষ্টির দিক থেকে কে এগিয়ে?
পুষ্টিবিদরা একমত—ডিমের খোলস সাদা হোক বা লাল, পুষ্টিগুণে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। নিউ ইয়র্কভিত্তিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, লাল ডিমে সামান্য বেশি ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকতে পারে, তবে সেটি এতই সামান্য যে দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদায় তেমন কোনো ভিন্নতা সৃষ্টি করে না।
মূল পার্থক্য কোথায়?
ডিমের আসল পুষ্টিগুণ নির্ভর করে মুরগির খাদ্য ও লালন-পালনের পরিবেশের উপর। প্রাকৃতিক খাদ্য খাওয়া মুরগির ডিমে ভিটামিন এ, ই, ওমেগা-থ্রি এবং খনিজ উপাদান বেশি থাকে। অন্যদিকে খামারের মুরগির ডিমে প্রোটিন বেশি, তবে চর্বির পরিমাণ কম। খামারে ভালো ফিড খাওয়ানো হলে সেগুলোর ডিমের গুণগত মানও অনেক ভালো হয়।
কুসুমের রঙ কি কিছু বোঝায়?
ডিমের কুসুমের রঙ অনেক সময় ডিমের পুষ্টিমানের ইঙ্গিত দেয়। কুসুম যত গাঢ়, তত বেশি থাকে ক্যারোটিন, ভিটামিন এ ও খনিজ উপাদান। তবে অনেক খামার এই গাঢ় রঙ আনতে মুরগির খাবারে ক্যারোটিনয়েড জাতীয় উপাদান বা এমনকি লাল ক্যাপসিকাম মেশায়।
তাহলে দামের তারতম্য কেন?
লাল ডিমের দাম বেশি হওয়ার কারণ এতে পুষ্টিগুণ বেশি নয়, বরং লাল ডিম পাড়া মুরগির উৎপাদন খরচ বেশি—তারা বড় আকারের হয়, বেশি খায়, তাই খাবার খরচও বেশি। সে কারণে বাজারে লাল ডিম কিছুটা বেশি দামে বিক্রি হয়।
শেষ কথা
ডিমের রঙ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো মুরগির খাবার ও পরিবেশ। সাদা হোক বা লাল—উভয় রঙের ডিমই সঠিকভাবে উৎপাদিত হলে সমানভাবে পুষ্টিকর। তাই ডিম কেনার সময় শুধু খোলসের রঙ দেখে সিদ্ধান্ত না নিয়ে, ডিমটি কোথা থেকে এসেছে ও কীভাবে উৎপাদিত হয়েছে, সেটাই বিবেচনা করাই ভালো।
আলীম