
ছবি: জনকণ্ঠ
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ফুলচৌকি গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন, যা স্থানীয়ভাবে ফুলচৌকি মসজিদ নামেই পরিচিত। এই মসজিদটি শুধু একটি মসজিদই নয়, এটি বহন করে চলেছে এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক নীরব সাক্ষ্য। এর ইটের পরতে পরতে যেন মিশে আছে শত শত বছরের গল্প।
ফুলচৌকি মসজিদ কবে নির্মিত হয়েছিল, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও এর স্থাপত্যশৈলী ও নির্মাণশৈলী দেখে ধারণা করা হয় এটি মোগল বা সুলতানি আমলের শেষ দিকে নির্মিত। মসজিদের প্রতিটি খিলান, প্রতিটি দেয়াল এবং এর কারুকার্যপূর্ণ নকশা তৎকালীন মুসলিম স্থাপত্যের এক অনবদ্য উদাহরণ। মসজিদের ভেতরে আলো-আঁধারির খেলায় যে শান্ত ও পবিত্র পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তা যেকোনো দর্শনার্থীর মনে এক গভীর শ্রদ্ধার জন্ম দেয়।
ফুলচৌকি মসজিদটি মূলত ইটের তৈরি, যা চুন-সুরকি দিয়ে গাঁথা হয়েছে। মসজিদের দেয়ালগুলো বেশ পুরু, যা এটিকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ক্ষয় থেকে রক্ষা করেছে। এর ছাদটি একাধিক গম্বুজ দ্বারা শোভিত, যা দূর থেকে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের সৃষ্টি করে। মসজিদের অভ্যন্তরেও রয়েছে অলংকৃত মেহরাব ও নকশাদার খিলান, যা তৎকালীন কারিগরদের দক্ষতার পরিচয় বহন করে। মসজিদের সামনে রয়েছে একটি বিশাল খোলা প্রাঙ্গণ, যা মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের জন্য যথেষ্ট স্থান সরবরাহ করে।
ফুলচৌকি মসজিদ কেবল একটি ঐতিহাসিক স্থাপনাই নয়, এটি ফুলচৌকি এবং এর আশপাশের গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি অনুষ্ঠানে এখানে মুসল্লিদের ভিড় জমে। মসজিদটি এলাকার সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। স্থানীয় প্রবীণরা মনে করেন, এই মসজিদ তাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি বহন করে, যা তাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত করে।
এই ঐতিহাসিক মসজিদটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দাঁড়িয়ে থাকলেও, এর সংরক্ষণ ও সংস্কারের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এর কিছু অংশ ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসনের উচিত এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি সংরক্ষণে এগিয়ে আসা। এটি শুধু একটি মসজিদ নয়, এটি আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা অপরিহার্য।
ফুলচৌকি মসজিদ নীরবে দাঁড়িয়ে আছে, তার প্রতিটি ইটের ভাঁজে লুকিয়ে আছে অগণিত ইতিহাসের গল্প। এটি কেবল একটি মসজিদই নয়, এটি রংপুরের সমৃদ্ধ ইতিহাসের এক জীবন্ত দলিল, যা আমাদের অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়।
এম.কে.