
ছবি: সংগৃহীত
সবার সামনে আপনি একজন হ্যাপি পারসন। সবসময় হাসিখুশি, প্রাণচঞ্চল, চেহারায় থাকে আত্মবিশ্বাসের ছাপ। বন্ধুরা ভাবে, আপনি বুঝি জীবনে কোনো কষ্টের ছোঁয়াই পাননি। অথচ একা ঘরে ফিরে আয়নার সামনে দাঁড়ালেই আপনি হন অন্য এক মানুষ—একজন ভাঙা মানুষ, যাঁর ভিতরে জমে আছে অসংখ্য না বলা কষ্ট।
এই গল্পটা শুধু আপনার না—এটা আমাদের অনেকেরই। হাসিমুখে আমরা যে কষ্টগুলো ঢেকে রাখি, সেই গল্পগুলো কেউ জানতে চায় না, কেউ বোঝেও না। কারণ, আমাদের সমাজ এখনো মনে করে, যে কাঁদে না, সে বুঝি কষ্টে নেই।
অভিনয়ের আড়ালে বাস্তবতা
একটা সময় আপনি হয়তো কাউকে বলার চেষ্টা করেছিলেন, "ভালো নেই"—কিন্তু জবাব এসেছিল, "তুমি তো সবসময়ই এত পজিটিভ!" সেই ‘পজিটিভ’ শব্দটাই তখন আপনার কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছিল বোঝা—যেন আপনাকে সবসময়ই ভালো থাকতে হবে, যেন আপনি কষ্ট পেতে পারেন না। তখন থেকেই শুরু হয়েছিল এক নিরব যুদ্ধ—নিজের সাথে নিজের।
আমরা সবাই একা, অথচ একসাথে
জীবনে কোনো না কোনো সময় আমরা সবাই এই অবস্থার ভেতর দিয়ে যাই। প্রেমে ব্যর্থতা, পরিবারের অবহেলা, ক্যারিয়ারের চাপ, নিজের অসম্পূর্ণতা—সব কিছু মিলে আমাদের ভিতরে তৈরি হয় এক অদৃশ্য চাপ। কিন্তু সবার সামনে আমরা হেসে চলি। কারণ আমরা ভয় পাই—যদি কেউ আমাদের দুর্বলতা দেখে ফেলে?
কষ্ট লুকিয়ে রাখা কি সমাধান?
নাহ, একদমই না। কষ্ট লুকিয়ে রাখার মানে এই নয় যে সেটা নেই। বরং সেটা ধীরে ধীরে ভেতর থেকে ক্ষয় করতে থাকে। মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া ঠিক যতটা জরুরি, ততটাই জরুরি কাউকে নিজের কষ্টের কথা বলার সাহস রাখা। সেটা বন্ধু হতে পারে, পরিবার হতে পারে, বা একজন থেরাপিস্ট। চুপ করে থাকা কোনো সমাধান নয়।
হাসিমুখ মানেই সুখী মানুষ না
হাসিমুখ একটা মুখোশ হতে পারে, কিন্তু অন্তরের কান্না কখনো মিথ্যে নয়। আপনি যদি এমন কাউকে চেনেন, যে সবসময় হাসে, একটু সময় নিয়ে তার পাশে বসুন। জিজ্ঞেস করুন, “তুমি কেমন আছো?”—হয়তো সেদিনই সে আপনাকে খুলে বলবে তার না বলা গল্পটা।
শেষ কথা:
আপনার হাসিমুখের পেছনের গল্পটা হয়তো কেউ এখনো শুনতে চায়নি। কিন্তু বিশ্বাস রাখুন, একদিন কেউ ঠিকই বলবে—“তোমার গল্পটা শুনতে চাই।” সেই পর্যন্ত, নিজেকে ভালোবাসুন, কষ্টকে অবহেলা নয়—বোঝার চেষ্টা করুন। কারণ আপনি একা নন—আপনার মতো অনেকেই আছেন, যারা হাসিমুখের আড়ালে লুকিয়ে রাখছেন এক ভাঙা হৃদয়ের গল্প।
আসিফ