সংগৃহীত
একটি নতুন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য ডলফিন এবং ওর্কা এখন এমন এক বিবর্তনের পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখান থেকে তারা আর কখনো স্থলভূমিতে ফিরে যেতে পারবে না। অর্থাৎ, তারা এখন পুরোপুরি জলজ প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়েছে।
এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিজ্ঞান জার্নাল" Proceedings of the Royal Society B" -তে,গবেষণার নেতৃত্ব দেন সুইজারল্যান্ডের ফ্রিবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী রবার্ট ফারিনা।
ডলফিন-ওর্কার অতীত বলছে প্রায় ৫ কোটি বছর আগে, ডলফিন ও ওর্কার পূর্বপুরুষ ছিল স্থল স্তন্যপায়ী প্রাণী। দেখতে ছিল অনেকটা নেকড়ে বা হরিণের মতো। তারা চার পায়ে চলত, নদীর ধারে বাস করত এবং মাছ বা ছোট জলজ প্রাণী খেত। ধীরে ধীরে খাদ্য ও পরিবেশের টানে তারা পানির ধারে আরও বেশি সময় কাটাতে শুরু করে।
বিবর্তনের ধাপে ধাপে গবেষকরা ৫,৬০০ টিরও বেশি স্তন্যপায়ী প্রাণীর বিবর্তন বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে ডলফিন ও ওর্কা ধীরে ধীরে আধা-জলজ জীবনধারা থেকে সম্পূর্ণ জলজ জীবনে রূপান্তরিত হয়।
এই রূপান্তরের সময় তারা যে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে তা হলো:
- পেছনের পা ছোট হয়ে যায়, সামনের পা রূপ নেয় পাখনায়
- লেজ শক্ত ও চ্যাপ্টা হলে সাঁতারে দক্ষতা তৈরি করে
- নাক চলে যায় মাথার উপরের দিকে, যাতে সহজে ভেসে উঠে বাতাস নিতে পারে
- শরীর লম্বা ও চেপে যাওয়া আকারে রূপান্তরিত হয়
- গর্ভধারণ ও বাচ্চা প্রসবের প্রক্রিয়া পানির উপযোগী হয়ে ওঠে
- খাদ্য গ্রহণ ও হজম পদ্ধতি পুরোপুরি উচ্চ-শক্তির মাংসাশী রূপে গড়ে ওঠে
এই পরিবর্তনগুলো এতটাই গভীর যে বিজ্ঞানীরা বলছেন এখন তারা আর কখনো স্থলজীবনে ফিরে যেতে পারবে না।
ডোলোর আইন বলছে এই রূপান্তর “ডোলোর আইন” (Law of Dollo) নামক বিবর্তন তত্ত্বকে প্রমাণ করে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, একবার কোনো জটিল বৈশিষ্ট্য (যেমন- পা, স্খলন ক্ষমতা) হারিয়ে গেলে, তা আর ফিরে আসে না।
বিপদের মুখে সাগরের রাজারা বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন এই অতিরিক্ত বিশেষায়িত রূপের কারণে ডলফিন ও ওর্কা এখন পরিবেশগত পরিবর্তনের সামনে অত্যন্ত দুর্বল। সমুদ্র দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং সমুদ্রের উষ্ণতা বৃদ্ধি সব কিছুই তাদের আবাসস্থল নষ্ট করছে।
গবেষণার প্রধান লেখক রবার্ট ফারিনা বলেন,“ডলফিন ও ওর্কা সমুদ্রের শীর্ষ শিকারি হলেও, তারা এখন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।"
ডলফিন ও ওর্কা একসময় মাটি ছুঁয়ে হেঁটেছিল, আজ তারা পানির রাজা তবে এই রাজত্ব এখন বিপদের মুখে। স্থলে ফেরার কোনো উপায় নেই, তাই তাদের ভবিষ্যৎ এখন পুরোপুরি সমুদ্রের সুস্থতার উপর নির্ভর করছে।
আমাদের দায়িত্ব সমুদ্রকে রক্ষা করা, আর এই আশ্চর্য জলজ প্রাণীদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা।
হ্যাপী
