সীডলেস লেবু চাষ করে সফল মাদ্রাসা শিক্ষক মামুনুর রশিদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সীডলেস লেবু চাষ করে সফলতা পেয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষক মামুনুর রশিদ। কৃষির প্রতি তাঁর রয়েছে বিশেষ আগ্রহ। বাড়ির আঙিনা ও পতিত জমিতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের সবজি চাষ করতেন তিনি। দেড় বছর আগে বিনা মূল্যে সরকারিভাবে পাওয়া ৫০টি লেবুর চারা দিয়ে শুরু করেন তাঁর লেবু চাষ।

পরে ফলন ভালো হওয়ায় মাদারীপুর থেকে ৪০০টি সীডলেস জাতের লেবুর চারা এনে বড় পরিসরে বাগান শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তাঁর বাগানে ৫০০-র বেশি লেবু গাছ রয়েছে এবং ফলনও ভালো হয়েছে।

উপজেলার পৌর শহরের বড় বাজার সংলগ্ন মক্কীনগরে ২ বিঘা জমিতে তিনি এই লেবু বাগান গড়ে তুলেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি লেবু গাছে ভরা বিশাল একটি বাগান। পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে সবুজ ও হলুদাভ-সবুজ লেবু, যেগুলো বাতাসে দুলছে। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে লেবুর মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণ। বাগানের ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে বেগুন ও পেঁপে গাছও।

মামুনুর রশিদ জানান, দেড় বছর আগে সরকারিভাবে বিনামূল্যে ‘বীনা’ জাতের ৫০টি লেবুর চারা পান। সেগুলো রোপণ করে ভালো ফলন পাওয়ায় লেবু চাষে আগ্রহী হন। পরে মাদারীপুর থেকে সংগ্রহ করেন ৪০০টি সীডলেস লেবুর চারা এবং ২ বিঘা জমিতে সেগুলো রোপণ করেন। বর্তমানে তাঁর বাগানে প্রায় ৫০০টি লেবু গাছ রয়েছে, যেগুলো থেকে ভালো ফলন আসছে। ইতোমধ্যে লেবু বিক্রি করেও আয় হচ্ছে। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ৫০–৬০ হাজার টাকার লেবু বিক্রির আশা করছেন তিনি।

তিনি বলেন, “আমি চায়না থ্রি সীডলেস জাতের লেবু চাষ করেছি। এই লেবু রসালো এবং ঘ্রাণযুক্ত। এর বাজারে ভালো চাহিদা রয়েছে। পাইকাররা বাগান থেকেই লেবু কিনে নিয়ে যায় এবং দামও ভালো দিচ্ছে। প্রতি তিন দিন পরপর লেবু বিক্রি করা যায়।”

মামুনুর রশিদ আরও বলেন, “অন্যান্য ফসলের তুলনায় লেবু চাষ অনেক বেশি লাভজনক। একবার লাগালে দীর্ঘদিন ফলন পাওয়া যায়। বিশেষ কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। দুইজন শ্রমিক বাগান পরিচর্যায় নিয়োজিত আছে। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার, কীটনাশক ও সার প্রয়োগ করতে হয়।”

তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মামুনুর রশিদ বলেন, “শিক্ষকতার অবসরে লেবু বাগানে সময় কাটাই। এখানে এলে মনটা শান্তিতে ভরে যায়। নিজের হাতে গড়া ফসলের যত্ন নেওয়ার আনন্দই আলাদা। আশেপাশের মানুষও আমাকে উৎসাহ দেয়। কৃষিতে আরও ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখি।”

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসসুম বলেন, “আখাউড়া পৌরসভার মক্কীনগর এলাকায় তরুণ উদ্যোক্তা মামুনুর রশিদ দুই বিঘা জমিতে সীডলেস লেবুর চাষ করেছেন। এই জাতের লেবু বীজবিহীন এবং প্রতি গাছে থোকা থোকা লেবু ধরে। একটি পরিপক্ব গাছ থেকে বছরে প্রায় ২০০টি লেবু পাওয়া যায়। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো—৪ থেকে ৫ মাসের মধ্যেই ফল আসা শুরু হয়। আমাদের উপজেলা কৃষি অফিস থেকে যদি কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, আমরা তা দিতে প্রস্তুত।”