২০২৫ সালের দ্রুত বদলে যাওয়া ব্যবসায়িক পরিবেশে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সঠিক নেতৃত্ব বেছে নেওয়া এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেসব প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, ডেলয়েটের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তারা ১২ গুণ বেশি ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করেছে।
কিন্তু সঠিক নেতার খোঁজ পেতে হলে আগে বুঝতে হবে কোন গুণগুলো এখন সবচেয়ে জরুরি। সেটি নির্ভর করে বর্তমানের ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জগুলো কী, তা বোঝার ওপর। সেই ভিত্তিতেই ২০২৫ সালের জন্য সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ তিনটি নেতৃত্বগুণ চিহ্নিত করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক হায়ারিং সংস্থা ইয়েলো ব্রিকস।
চলুন দেখে নেওয়া যাক, কী গুণসম্পন্ন নেতৃত্ব নিয়োগ করলে আপনার প্রতিষ্ঠান এগিয়ে থাকবে প্রতিযোগিতায়।
সহনশীল নেতৃত্ব মানেই সহনশীল প্রতিষ্ঠান
২০২৫ সালের নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যে গুণটি প্রথমেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তা হলো 'রেজিলিয়েন্স' বা মানসিক সহনশীলতা। এর মানে, একজন নেতা হতে হবে দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষম, লক্ষ্যনির্ভর, আবেগীয় বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এবং দলকে উদ্বুদ্ধ করার মতো ইতিবাচক মনোভাবসম্পন্ন।
সহনশীল নেতারা সাধারণত দূরদর্শী চিন্তায় দক্ষ, যোগাযোগে সাবলীল এবং বিকাশধর্মী মানসিকতার অধিকারী হন। ক্রমাগত বদলে যাওয়া গ্রাহকচাহিদা, শ্রমবাজার এবং নীতিমালার পরিবেশে তারাই সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করেন।
পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সহনশীল নেতারা প্রতিষ্ঠানের পারফরম্যান্সে দৃশ্যমান উন্নতি আনতে পারেন। তাই এমন নেতার সন্ধান করুন, যিনি শুধু নিজেই চাপ সহ্য করতে পারেন না, বরং তার দলকেও মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখতে পারেন।
বাক্সের বাইরে চিন্তায় পারদর্শী নেতৃত্ব
‘লেটারাল থিঙ্কিং’ বা ভিন্নমুখী চিন্তাধারার নেতৃত্ব ২০২৫ সালের অন্যতম চাহিদাসম্পন্ন গুণ হয়ে উঠেছে। এই ধরনের নেতৃত্ব মানে হচ্ছে, নেতাকে হতে হবে নতুন সমস্যা মোকাবেলায় সৃজনশীল, অচেনা পরিস্থিতিতে নতুন কাঠামো তৈরি করতে সক্ষম এবং প্রতিষ্ঠানের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার মতো উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন।
ম্যাকিন্সির এক জরিপে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ নির্বাহী ‘উদ্ভাবনী নেতৃত্ব’কে তাদের শীর্ষ তিনটি কৌশলগত অগ্রাধিকারের একটি হিসেবে দেখছেন।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩ সালের এক জরিপে ৭ হাজার বিশ্বনেতাকে নিয়ে দেখা গেছে, যারা প্রতিষ্ঠানের প্রচলিত ধারণাকে নতুনভাবে ভাবতে পেরেছেন, তারাই গ্রাহক সন্তুষ্টি এবং বাজার দখলে এগিয়ে থেকেছেন।
অতএব, আগামী নেতৃত্ব নিয়োগে এমন প্রার্থীর সন্ধান করুন যিনি শুধু সমস্যা সমাধানে নয়, বরং প্রতিষ্ঠানের নতুন দিক উন্মোচনে ‘চিন্তা বদলাতে’ প্রস্তুত।
তথ্য বিশ্লেষণে দক্ষতা ও সচেতনতা
২০২৫ সাল দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ডেটা ব্যবহারে সক্ষমতা আর অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। এমআইটি’র স্লোয়ান স্কুলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতাদের এমন দক্ষ হতে হবে যাতে তারা তথ্য বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং প্রতিষ্ঠানে একটি ‘ডেটাভিশ্বাসী সংস্কৃতি’ গড়ে তুলতে পারেন।
নেতা হিসেবে যদি আপনি বাজার পরিবর্তনের গতি, কর্মীদের দক্ষতা হ্রাস বা সম্পৃক্ততার মতো ইস্যুতে ডেটা পান, তাহলে তা বিশ্লেষণ করে কার্যকর কৌশল নির্ধারণে আপনাকে সক্ষম হতে হবে।
এর মানে এই নয় যে, একজন নেতাকে তথ্যবিজ্ঞানী হতে হবে। বরং তাকে হতে হবে ডেটা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো সচেতন, বিশ্লেষণপূর্বক কৌশল নির্ধারণে সক্ষম এবং ডেটা-কেন্দ্রিক চিন্তাভাবনার একজন কার্যকর প্রবক্তা।
আইবিএম-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠান তথ্য বিশ্লেষণকে কাজে লাগায়, তারা প্রতিযোগীদের তুলনায় ২.২ গুণ বেশি সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছে। ২০২৩ সালে বিশ্বের শীর্ষ ডেটা অফিসারদের নিয়ে পরিচালিত আরেক জরিপে দেখা গেছে, ৯৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এ বছর ডেটা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে চায়।
এটাই বোঝায়, নেতৃত্বে যদি ডেটাভিত্তিক চিন্তাধারায় দক্ষ কাউকে আনতে পারেন, আপনি প্রতিযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ এক ধাপ এগিয়ে থাকবেন।
২০২৫-এর উপযোগী নেতৃত্ব খোঁজা কেন জরুরি
নেতৃত্বের গুণাবলির তালিকা শুধু সহনশীলতা, ডেটা-দক্ষতায় সীমাবদ্ধ নয়। তবে ২০২৫ সালের ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে এই তিনটি গুণ আজ সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক।
সঠিক নেতা খুঁজে পাওয়া অবশ্যই সহজ কাজ নয়। বিশেষ করে যখন মানবসম্পদ বিভাগকে একই সঙ্গে বিভিন্ন কৌশল এবং চাহিদার মধ্যে সমন্বয় করতে হয়। তবে এই তিনটি নেতৃত্বগুণকে প্রাধান্য দিয়ে খোঁজ শুরু করলে আপনার পরবর্তী নিয়োগ শুধু প্রতিষ্ঠানকে নেতৃত্বই দেবে না, বরং সেটিকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করবেও।
সূত্র:https://tinyurl.com/2u5xsfmt
আফরোজা
