
মুন্নী খান আধুনিক যুগের একজন গৃহিণী। কোরবানীর ঈদে তাঁর রয়েছে নানা প্রস্তুতি। বাড়ি যশোর শহরের ঘোপ পিলু খান সড়কে। স্বামী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান একজন সফল ব্যবসায়ী। দুই পুত্র সন্তান নিয়ে তাদের সুখের সংসার। দুই পুত্রের স্কুলে নিয়ে যাওয়া, বাসায় দেখাশোনা করার পাশাপাশি মুন্নী খান ভাল খাবার রান্নার বিষয়ে বেশ পারদর্শী। এ ব্যাপারে তাঁর স্বামী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান স্ত্রীকে নানা সহযোগিতা করেন।
ঈদের প্রস্তুতি সম্পর্কে মুন্নী খান বলেন, আমি চুল বাঁধতে বাঁধতে আর রাঁধিনা। হেয়ার কালার থেকে শুরু করে নেইল এক্সটেনশন করিয়ে এসে রান্না করি। আমার ঈদ রান্নাতে শুধু সেমাই-পোলাওতেই সীমাবদ্ধ নেই। বিরিয়ানি, ডেজার্ট চুলাতে বসিয়েছি তো স্টেক দেই ওভেনে। ঈদের দিনটি অনেক বেশি উপভোগ করতে আমার প্রস্তুতিটা থাকে অনেক বেশি। চাঁদরাত থেকে শুরু হয় আমার ঘরের ঈদ আনন্দ। ঈদের সময় আমার ঘরের কোণে কোণে, কদমে কদমে থাকে আনন্দ-উল্লাস। ঈদের দিনটি সুন্দর করতে থাকে একমাস আগের থেকে প্রস্তুতি। সামনে যেহেতু ঈদ-উল-আযহা সেহেতু কোরবানি ঈদের প্রস্তুতিটি শেয়ার করছি। একমাস আগের থেকে মনটাকে আগে প্রস্তুত করি যে কি করবো, কি কি করতে হবে, কোরবানির পশু কেনাটা সবচেয়ে বড় ব্যাপার থাকে। কখনো ঈদের একমাস আগে কখনো ঈদের একদিন আগে পশু কেনা হয়। পরিবারের সকলের জন্যে নতুন পোশাক। দাঁ, বটি, ছুরি ধার করানো সহ কেনাকাটা।
এই ঈদে আমি নতুন কিছু পাত্র কিনি, ঈদের খাবার রান্না ও পরিবেশনের জন্য। কারণ এই ঈদে আমার বাড়ি অন্য ঈদের তুলনায় সবচেয়ে বেশি অতিথি আসে। বিভিন্ন জায়গায় দেওয়া ছাড়াও নিজ ফ্রিজে মাংস রাখার জন্য বিভিন্ন সাইজের পলিব্যাগ কিনি। ডেজার্ট আইটেম (মিষ্টান্ন ) ছাড়াও মাংস, পোলাও, বিরিয়ানির জন্য রান্নার বিভিন্ন উপকরণ কেনা হয়। প্রথম পনেরো দিন কেনাকাটায় যায়। আর ঈদের আগের পনেরো দিন থাকে রান্নার প্রস্তুতি অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের মসলা রৌদ্রে ও চুলায় শুকিয়ে মিক্সার ব্লেন্ডিারে গুড়ো করে রাখি। আমি দুই ভাবেই মশলা গুড়ো করি। রোদে শুকিয়ে গুড়ো মশলা রান্নার শুরুতে আর চুলায় ভাজা মশলা রান্নার শেষে ব্যবহার করি। তাইতো আমার রান্নার স্বাদ ভিন্ন ও সুস্বাদু হয়।ঈদের রান্নার নানা উপকরণের মধ্যে থাকে মশলা।
এ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের মশলা গুড়ো করে আলাদা আলাদা জারে (বয়ামে) সংরক্ষণ করে রাখি। এছাড়া আমার রেসিপির স্পেশাল শাহী বিরিয়ানির মশলা ও শাহী মাংসের মশলা বেশি করেই করে রাখি। কারণ ঈদে এটা খাওয়ার ধুম পরে আমার বাড়িতে। এছাড়া আতপ চালের গুড়া করে রাখি ঈদে কোরবানির মাংসের সাথে চালের রুটি, ছিটা রুটি কেউ খেতে চাইলেই যেন আমি সাথে সাথেই করে দিতে পারি। বিভিন্ন ধরনের বাদাম গুড়া করে জারে সংরক্ষণ করি। খাবারের স্বাদ বাড়াতে পেয়াঁজ বেরেস্তার জুরি নেই। তাই পেয়াঁজ বেরেস্তা, ঘি দিয়ে সেমাই ভেজে ১০/১৫ দিন আগেই করে রাখি। এরই সাথে চলতে থাকে ঘর গোছানো, সাজানোর কাজ। পর্দা থেকে পাপোশ সব পরিস্কার-পরিপাটি করা। ঈদের পাঁচ দিন আগ থেকে চলে আদা-রসুন ইত্যাদি ছাড়াও বিভিন্ন খাবার তৈরি। বিভিন্ন ডেজার্ট, শুকনা কিছু রেসিপি, টক দই পাতা, বোরহানি তৈরি ইত্যাদি। যা আমার রেসিপিতে সাতদিন পর্যন্ত ভালো থাকে। ঈদের তিনদিন আগে বিভিন্ন ডেজার্ট তৈরি করবো। ইতোমধ্যে তার কাজ চলছে। আইসক্রিম, কেক, পায়েস, সেমাই, পুডিং এবং ফালুদা তৈরির জন্যে সাবুদানা রান্না ছাড়াও বিভিন্ন আধুনিক ডেজার্ট করে রাখি যা ফ্রীজে কয়েকদিন থেকে আরো মজাদার হয়। সাথে কোন বাড়িতে কতটুকু মাংস যাবে। বিশেষ করে কিছু গরীব পরিচিত মানুষদের লিস্ট আগেই করে ফেলি। ঈদের আগের দিন থেকেই আমার বাসায় অতিথি আসা শুরু করে আর আগেই নিজেকে ও পরিবারের সকল সদস্যকে পরিপাটি করে রাখি, হাতে মেহেদীটা দিয়ে দেই, চাঁদ রাতে বাজি ফুটিয়ে ঈদকে বরণ করি। ঈদে রান্না করি অনেক কিছু। যা দিয়ে টেবিল ভরিয়ে ফেলি। সবকিছু আমার সুন্দর প্রস্তুতির কারণে ঈদের কাজ আমার সহজ হয়ে যায়। বেশিরভাগ রান্না চাঁদ রাতে করে রাখি। ঈদের দিন দুই-তিনটি মতো রান্না থাকে তাও সব গোছানো। সময় তেমন লাগে না। আর এ কারণেই আনন্দ হুল্লোড়ে কাটে আমার ঈদ।
রাজু