
আর মাত্র দুদিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। শেষ সময়ে চাহিদার পশু ক্রয়ে ভিড় বেড়েছে হাটগুলোতে। বিক্রিও হচ্ছে ভালো। তবে এবার ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। আবার দাম নিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্রেতারা বলছেন দাম বেশি, বিক্রেতারা বলছেন লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন।
সবকিছু ছাপিয়ে যশোরে কোরবানির ঈদের প্রধান আলোচ্য হয়ে উঠেছে গরুর সাইজ (আকৃতি)। ব্যক্তিগত খামার থেকে শুরু করে পশুর হাট—সর্বত্রই মাঝারি আকৃতির গরুর প্রতি আগ্রহ বেশি ক্রেতাদের। হাট মালিকদের তথ্য অনুযায়ী, এবার ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে গরু কিনতে চাচ্ছেন বেশিরভাগ ক্রেতা।
যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাব মতে, জেলায় চাহিদার অতিরিক্ত কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে। তবে সেই হিসেবের খুব একটা প্রয়োজন হচ্ছে না বলেই মনে করছেন অনেকে। কারণ, গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানি দেওয়ার মানুষের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। যা নিয়ে খামারিরা রীতিমতো দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুল হক জানান, এবারের ঈদুল আজহায় জেলায় মোট ৯৫ হাজার ৮১২টি পশুর চাহিদা রয়েছে। সেখানে পশু প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৭৪টি। এর মধ্যে রয়েছে গরু ৩৫ হাজার ৩৩৮, মহিষ ৯৫, ছাগল ৩৮ হাজার ৫৫৮ এবং ভেড়া ৫৮৩টি।
জেলার ১৩ হাজার ১৪৬ জন খামারি ও ব্যক্তিগতভাবে পশু লালন-পালনকারীদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ডা. রাশেদুল হক আরও বলেন, যশোর জেলায় এবার ১৮ হাজার ৭৬২টি কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।
খামারি ও বাড়িতে লালিত পশুর মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর কোরবানির এক-দুই মাস আগে থেকেই ক্রেতাদের আসা-যাওয়া শুরু হয়। কিন্তু এবার তা দেখা যায়নি। তিন থেকে সাড়ে তিন মণ ওজনের গরু ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে কিনতে চাইছেন ক্রেতারা। এর চেয়ে বেশি ওজনের গরুর ক্রেতা খুবই কম।
যশোর সদর উপজেলার ভায়না গ্রামের খামারি শফিউল ইসলাম শফি বড় সাইজের গরু প্রস্তুত করেছিলেন বেশি লাভের আশায়। তার খামারের গরুর ওজন প্রায় ১৪ মণ। দাম হাঁকিয়েছিলেন ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা। শফির স্ত্রী বিউটি খাতুন জানান, মাত্র কয়েকজন খামারে এসেছিলেন। তারা গরুর আকার ও দাম শুনে দ্রুত চলে গেছেন।
যশোর শহরতলীর শেখহাটি কালিতলার খামারি সুজন রায় বলেন, এবার যে কোনো সময়ের তুলনায় গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি। সেই তুলনায় গরুর দাম পাওয়া যাচ্ছে না। আগে যে সাইজের গরু এক লাখ ২০ হাজার থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি, এবার তার দাম বলছে ৭০-৮০ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, “এবার সব গরু বিক্রি হবে না বলেই মনে হচ্ছে।” একই অবস্থা অন্যান্য খামারিদেরও।
যশোরের রাজারহাট এলাকার অস্থায়ী কোরবানির হাটের অন্যতম ইজারাদার খুরশিদ আলম বাবু জানান, গত পাঁচ দিনে হাটে ৭০ থেকে ৮০টি গরু বিক্রি হয়েছে। যার অধিকাংশই বিক্রি হয়েছে শেষ দুই দিনে।
শেষ মুহূর্তে হাট জমে উঠছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যারা মাঝারি সাইজের গরু তুলবেন তাদের গরু বিক্রির সম্ভাবনা বেশি। কারণ এবার অধিকাংশ ক্রেতার চাহিদা ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার গরু।”
সানজানা